কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলায় নতুন করে আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাঠানো সবশেষ তথ্য অনুযায়ি, কক্সবাজারের ৯ উপজেলার ৭১টি ইউনিয়মের মধ্যে ৬০টি প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ধস, সাপের কামড় ও বানের পোনিতে ভেসে যাওয়ার দুর্ঘটনায় এ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চকরিয়া-আনোয়ারা আঞ্চলিক মহাসড়ক, টেকনাফ-কক্সবাজার সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত ৬০িউপজেলায় রোপা আমন, মৌসুমি শাক-সবজি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাতের পর থেকে নতুন নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে পড়ছে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি মঙ্গলবারও (৮ আগস্ট) বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদী, খাল ও ছড়ার অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। আরও কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মঙ্গলবার কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ি, জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চকরিয়া উপজেলা। পৌরসভাসহ এই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের দুই লাখ ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পেকুয়া উপজেলা। এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৮৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ি, বন্যায় কক্সবাজারের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি এক কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি। এদিকে জেলার ২০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নিয়েছে বলেও জেলা প্রশাসন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেন, “কক্সবাজারের নয় উপজেলার ৭১ ইউনিয়নের মধ্যে ৬০ ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় এসব ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ। বন্যা দুর্গতদের জন্য এর মধ্যে দুই লাখ নগদ টাকা ও ৪৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। “ বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে,অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের কয়েক লাখ মানুষ।
চট্টগ্রাম জেলার কমপক্ষে ১৫টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দী অবস্থায় রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও বন্যায় জেলাটিতে এ পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বান্দরবান জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে যে, গত তিন দিনে জেলাটিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় শতাধিক পাহাড় ধস হয়েছে। এতে কমপক্ষে দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। আর এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।