সদ্যবিদায়ী বছর ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মানুষের। বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত এবং ১০৯৯৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৬১ সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত ও ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হন।
২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হয়েছে ২ হাজার ৩১টি। এসব দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৪৩ শতাংশ, নিহতের ২৭.২৩ শতাংশ ও আহতের ১২.৯০ শতাংশ।
এছাড়াও রেলপথে ৫২০ দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৪৮ দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছে।
পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিবিধ কারণে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। আর ২৬ মার্চ সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ৭ জুলাই।
সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ১৯৫০ জন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮ জন আইনজীবী ও ১০ জন প্রকৌশলী এবং ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৭৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ১৬ জন সেনা সদস্য, ৪০ জন পুলিশ সদস্য, ১ র্যাব সদস্য, ৭ জন বিজিবি সদস্য, ৩ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৩ জন আনসার সদস্য, ২ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ১ জন এনএসআই সদস্য, ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ জন সাংবাদিক, ৬৪৭ জন নারী, ৪৬৬ জন শিশু, ৪১৬ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ১৫২৬ জন চালক, ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮ জন প্রকৌশলী, ৭ জন আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ জন চিকিৎসক।
দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৮৫৫০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৬.১৫ শতাংশ বাস, ২৪.৮৪ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫.৯১ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৫.৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৬.০২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.১৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত ৯ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ইজিবাইক-অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এ জাতীয় থ্রি-হুইলার গাড়িগুলোর আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
প্রতিবছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এক প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।