গণরুম কি? গণরুমের নিয়ন্ত্রণ ছিল কাদের হাতে?

গণরুম বিলুপ্তির ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ০৬:০৪ এএম

গণরুম বিলুপ্তির ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব আবাসিক হলে গণরুম বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সভা হয়। সভায় গণরুম বিলুপ্তির পাশাপাশি হলের গেমস রুমকে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়াও, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালুর বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রভোস্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।


গণরুম কি?
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীেদর জন শতভাগ আবাসিক সুবিধা নেই। ফলে হাজারের বিশ্বিবদ্যালয়রে বিভিন্ন হলের রুমে একসাথে গাদাগাদি করে থাকে প্রথম বর্ষে, মূলত এই রুমগুলোই বিশ্বিবদ্যালয়ে গণরুম নামে পরিচিত।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলে এখন ১২৩টি কক্ষ গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কক্ষে ২ হাজার ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব কক্ষের প্রতিটিতে ৪ জনের জায়গায় ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে রাতে ঘুমাতেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের গণরুমগুলোয় কাপড়চোপড়, স্যান্ডেল-জুতাসহ নিজের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের কোনো নিরাপত্তা নেই।

কোন হলে কয়টি গণরুম?
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৬টি গণরুমে ১৪৫ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৭টি গণরুমে ১৪২ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৫টিতে ১৪৫ জন, বিজয় একাত্তর হলে একটি বড় গণরুম রয়েছে। যেখানে ২৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করতেন।

এ ছাড়া কবি জসীমউদ্‌দীন হলের ৮টি গণরুমে ১১৬ জন, মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ১৮টি গণরুমে ২০০ জন ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৯টি গণরুমে ১১০ জন শিক্ষার্থীর বাস। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নির্দিষ্ট কোনো গণরুম নেই। তবে হলটির দোতলায় একটি বারান্দা রয়েছে, যেখান ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতেন।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৫টি গণরুমে ৮০ জন, জগন্নাথ হলে সন্তোষচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভবনে ৫টি গণরুমে ৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া অমর একুশে হলের তিনটি কক্ষ, টিভি রুম ও ক্রীড়াকক্ষে ১২৫ জন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে এক্সটেনশন বিল্ডিং-১ ও ২-এর ৬টি গণরুমে ১৫০ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলের ৪টি কক্ষ ও টিভি রুমে ১৩০ জন শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করতেন।

গণরুমের নিয়ন্ত্রণ ছিল কাদের হাতে?
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী নেতারাই মূলত এসব গণরুম নিয়ন্ত্রণে করতেন।

নারী শিক্ষার্থীদের হলে ছাত্রলীগের প্রভাব কম থাকায় হল প্রশাসনের অধীনে শিক্ষার্থীরা থাকেন। তারপরও কিছু হলে সিট-সংকট থাকায় প্রশাসনের অধীনে বেশ কিছু গণরুম ছিল। পাশাপাশি ছাত্রলীগও কিছু গণরুম নিয়ন্ত্রণ করত।

এর আগে বিএনপি আমলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এসব গণরুম নিয়ন্ত্রণ করতেন। 

Link copied!