গত দুই দিনে অন্তত ২০ সাংবাদিকের ওপর হামলা, গুরুতর আহত অনেকে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

গত দুই দিনে অন্তত ২০ সাংবাদিকের ওপর হামলা, গুরুতর আহত অনেকে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গত দুই দিনে অন্তত ছয়টি হামলার ঘটনায় ২০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন। 

হাইকোর্টে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা 

সর্বশেষ ঢাকার হাইকোর্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ঈশ্বরদী থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আক্তার। হামলার সময় বৈশাখী টেলিভিশনের মাইক্রোফোন ভাংচুরসহ মারধর করা হয় আরও অন্তত ১০ সাংবাদিককে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায় ঘোষণার পর বেলা ১২টার দিকে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিকরা। হঠাৎ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের উপস্থিতিতে দলটির শতাধিক নেতাকর্মী হট্টগোল শুরু করেন। এর প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ব্রিফিং বর্জনের পাশাপাশি অ্যানেক্স চত্বরে বসে পড়েন সাংবাদিকরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি জানান সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সাংবাদিকরা।

এক হাতের রগ কেটে অন্য হাতের কবজি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে

বাংলাভিশন টেলিভিশনের কলাপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম মিরনকে বেধড়ক কুপিয়ে এক হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। অন্য হাতের কবজি বরাবর ঝুলিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কুয়াকাটা পৌরসভায় নিজ বাসার সামনে তার ওপর হামলে পড়ে। দুই হাত ছাড়াও তার কপাল, মাথা, পেট ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য কোপের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্বজনসহ স্থানীয়রা উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল প্রেরণ করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মিরন ঢাকা থেকে রাতে কুয়াকাটায় ফিরেছেন। কুয়াকাটা পৌরসভার তুলাতলী মহাসড়কে নেমে ৫০ গজ দূরে বাসায় যাচ্ছিলেন। বাসায় ঢোকার আগমুহূর্তে তাকে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময়ের মিরন ডাক-চিৎকার করে লুটিয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের লোকজন দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘গুলি’, বাঁশ দিয়ে ৪ সাংবাদিককে মারধর

এদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে মারধরের শিকার হয়েছেন চার সাংবাদিক। অভিযোগ উঠেছে, তাদের লক্ষ্য করে গুলিও চালিয়েছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।

দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন দৈনিক খবরের কাগজের জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, আমার বার্তা প্রতিনিধি আব্দুল মালেক নীরব, চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন ও প্রচার সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ। আহতদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিকরা জানান, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দত্তপাড়া গ্রামে প্রবাসীর বাড়িতে দখল ও হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ৪ সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে ৮-১০ জন মুখোশধারী ব্যক্তি তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এবং সংবাদ সংগ্রহ না করে তাদের চলে যেতে বলে। সাংবাদিকরা তাদের কথা না মেনে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে বাঁশ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে।

শরীয়তপুরে ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলা

একই দিন দুপুরে শরীয়তপুরে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনের ওপর ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা করা হয়েছে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরও তিন সাংবাদিক আহত হন। আহতরা হলেন নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস ও দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ।

জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন সুজনসহ জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা।

স্থানীয়রা জানান, পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সুজন তার অফিসে যাওয়ার পথে নুরুজ্জামান শেখের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের হামলা শিকার হন। ছুরি ও হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা করা হয়। এ সময় সুজনকে ধরে রাখেন নুরুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা সুজনকে বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।

‘তোর কত বড় সাহস তুই নিউজ করস,’ বলে কুড়িগ্রামে ১ জনকে মারধর

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সুজন মাহমুদ নামের এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটায় রাজীবপুর বাজার কম্পিউটার গলিতে এ হামলা হয়। হামলাকারীরা সবাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমানের অনুসারী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক সুজন মাহমুদ বলেন, “সন্ধ্যা ছয়টায় রাজীবপুর বাজারে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল এসে আমার ওপর আক্রমণ করে। হামলার সময় উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা ও ছাত্রদল কর্মী আবদুল্লাহ আল-মামুন আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন –তোর কত বড় সাহস তুই নিউজ করস আবার থানায় অভিযোগ দিস।”

গত ৩ জানুয়ারি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমানের নামে ‘বাংলা এডিশন’ নামের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ‘স্বপদে বহাল অধ্যক্ষ, নেপথ্যে উপজেলা বিএনপি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন। এর জের ধরেই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির অনুসারীরা হামলা করেন।

সড়কে অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করায় নীলফামারীতে হামলা

এদিকে ৪ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর ডিমলায় সংবাদ প্রকাশের জেরে রেজোয়ান ইসলাম নামে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বার্তা বাজার’-এর নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

জানা গেছে, ৩ ফেব্রুয়ারি ‘সরকারি প্রকল্পের নামে চলছে হরিলুট, তিন কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে অনিয়ম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি তার করা ছিল। এর জেরে কাজের সাব-ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম দুলাল তার ওপর হামলা চালান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় তার পকেট থেকে নগদ টাকা, মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।  

Link copied!