অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
পুলিশের বাধার কারণে এবার পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতেও ‘শরৎ উৎসব ১৪৩২’ আয়োজন করতে পারেনি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় উৎসবটি করার কথা থাকলেও, ‘অনেকের কাছ থেকে আপত্তি আসায়’ কর্তৃপক্ষ থেকে আয়োজনে বাধা আসে। শেষ মুহূর্তে ‘গোলযোগ’ হওয়ার শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে চারুকলা কর্তৃপক্ষ ভেন্যু বরাদ্দ বাতিল করে, ফলে সেখানে উৎসবটি করা সম্ভব হয়নি।
পরে আয়োজকেরা উৎসবটি একই সময়ে গেন্ডারিয়ার কচিকাঁচার মেলার মাঠে আয়োজন করার ঘোষণা দেয়। সেখানে ‘অনুমতি না থাকার’ কথা জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে থেকে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফলে এই উৎসব আয়োজনে ১৯ বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লো বলে জানিয়েছেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
তিনি বলেন, “আমরা চারুকলার বকুলতলায় ১৯ বছর ধরে এই উৎসবটি করে আসছি। কোভিড মহামারী ছাড়া কোনো বছরই উৎসবটি বন্ধ হয়নি। এবার করতে পারলাম না।”
তবে উৎসবটি করতে না পারলেও জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিশুদের চিত্রাংকন এবং প্রয়াত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মৃতির প্রতি এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়ারী বিভাগ) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, “গেন্ডারিয়াতে শরৎ উৎসব করার ব্যাপারে কোনো পূর্ব-অনুমতি নেওয়া হয়নি।”
মানজার চৌধুরী বলেন, “আমরা চারুকলার বকুলতলায় উৎসবটি করার জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়েছিলাম। চারুকলা কর্তৃপক্ষকে ২৬ হাজার টাকা ভেন্যু বরাদ্দ বাবদ ভাড়াও পরিশোধ করেছি। কিন্তু আগের রাতে আমাদেরকে কোনো কারণ ছাড়াই চারুকলায় ভেন্যু বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। সেখানে অনুষ্ঠানটি করতে না পেরে আমরা গেন্ডারিয়াতে উৎসবটি করতে চেয়েছি। এখানেও পুলিশ এসে বন্ধ করে দিয়েছে।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
কেন শরৎ উৎসবে বাধা?
চারুকলার অনুষদের একজন শিক্ষক বলেছেন, মানজার চৌধুরীকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ ট্যাগ দিয়ে কেউ কেউ অনুষ্ঠান চলাকালীন ঝামেলা করতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে চারুকলা কর্তৃপক্ষ এখানে ভেন্যু বরাদ্দ বাতিল করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানজার চৌধুরীর সঙ্গে বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে কারা যেন পোস্টার করে, তা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।
চারুকলা থেকে ভেন্যু বরাদ্দ বাতিলে কী কারণ বলা হয়েছে, জানতে চাইলে মানজার চৌধুরী বলেন, “এখানে অনুষ্ঠান করলে ‘গোলযোগ’ হতে পারে, এমনটা আমাদেরকে মৌখিকভাবে জানিয়ে অনুষ্ঠান করতে মানা করেছে। কিন্তু আমাদের কাছে অনুষ্ঠান করার লিখিত অনুমতিপত্র আছে।”
লিখিত অনুমতি থাকলে অনুষ্ঠান করেননি কেন, প্রশ্নে মানজার চৌধুরী বলেন, “আমাদের অনুষ্ঠান তো সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু করার কথা। এর জন্য আগের রাতেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চারুকলার গেইট দিয়ে আমাদের সরঞ্জাম প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “এখানে অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনেকের কাছ থেকে আপত্তি এসেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নানান পক্ষ থেকেও আপত্তি থাকার কারণে অনুষ্ঠানটি আগামিকাল এখানে করতে মানা করা হয়েছে।”
কারা আপত্তি করেছে, কী ধরণের আপত্তি- জানতে চাইলে আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি একটু অসুস্থ। দাঁতের ডাক্তারের কাছে এসেছি। এখন কথা বলতে পারছি না।”