আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম
মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনও স্থান থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
রোববার (১৮ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আওতাধীন দপ্তর সংস্থার প্রধান ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্র, জনতা ও সাংবাদিকদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আরও একটি রক্তাক্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন করে স্বপ্ন দেখছে, নতুন করে আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করছে আমরা সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে এই সরকারে এসেছি।”
দপ্তর প্রধানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং নতুন বাংলাদেশ তৈরির যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে, সেখানে যেন এই ধরনের স্বৈরতন্ত্র আর কোনওদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমরা জানি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কি ধরনের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সামনের বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটুক সেটা আমরা চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে স্যার ভাবার বা বলার দরকার নেই আমি আপনাদের সন্তান হিসেবে এখানে এসেছি, আমি জনগণের পক্ষ থেকে এসেছি, জনগণের দাবি দাওয়া নিয়ে এসেছি, এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে এসেছি। আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফ্রিডম অব প্রেস যদি না থাকে ফ্রিডম অব স্পিচ নিশ্চিত হয় না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে সেজন্য বিভিন্ন আইন ও বিধিনিষেধ যেগুলো নিয়ে সমালোচনা রয়েছে সেগুলো পুর্নবিবেচনা করতে হবে। যাতে বাকস্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত না হয়।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি অনেক সাংবাদিক আহত ও শহীদ হয়েছেন তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত। আপনারা দেখেছেন আন্দোলনের মধ্যে কীভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, দেশ ব্ল্যাকআউটে চলে গেছিল, কি হচ্ছিল কিছুই জানা যাচ্ছিল না। তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ সরকারের হস্তক্ষেপে ছিল। সেই সময় আমাদের কোনও বক্তব্য প্রচার করা হতো না এবং যে কথাগুলো আমরা বলিনি সে কথাগুলো মিসকোড করে প্রচার করা হতো। তারপরও আমরা দেখেছি সে সময়ে কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আমাদেরকে সাপোর্ট দিয়েছে। আন্দোলনের পুরোটা সময় যারা ফিল্ডে কাজ করেছে সেই রিপোর্টাররা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। যারা সহযোগিতা করতে পারেনি তারা হয়তো হাউজের কারণে বা তাদের মালিকের কারণে এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা চাই না, এই অবস্থা বাংলাদেশে আবারও আর ফিরে আসুক। আমরা চাই, গণমাধ্যম যেন তার স্বাধীনতা নিয়ে জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে পারে।”
সাংবাদিকদের বেতনকাঠামো নিয়ে এ সময় উপদেষ্টা বলেন, “সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। আমরা যদি মেধাবীদের উৎসাহিত করতে না পারি তবে সাংবাদিকতা এগোবে না। মিডিয়ায় যারা রিপোর্টার ও জুনিয়র লেভেলে কাজ করে তাদের বেতন অত্যন্ত কম, অনেক ক্ষেত্রে বেতনকাঠামো মানাও হয় না, এ বিষয়ে নীতিমালা প্রয়োজন।”
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত গতিশীল ও আধুনিকায়নের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি। পাশাপাশি সেন্সর বোর্ডের কমিটিগুলো দ্রুততম সময়ে পুনর্গঠন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের অনেক আকাঙ্ক্ষা চলচ্চিত্র নিয়ে কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না। অনেকগুলো চলচ্চিত্র সেন্সর অবস্থায় আছে যদি কোনও নীতিমালা ভঙ্গ না হয় তবে দ্রুত চলচ্চিত্রগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কোনও ধরনের স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিগত পরিচয় যেন বিবেচনায় না নেওয়া হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। একেবারে নীতিমালা ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে যেন এসব বিষয় বিবেচনা করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি সেই লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কাজ করবো। আমাদের কাছে একটি সুযোগ এসেছে, আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাবো। তথ্য ও সম্প্রচার নিয়ে কোনওরকম সমালোচনা যেন না আসে সেটা নিয়েও আমরা সচেষ্ট থাকবো। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম সূচকে আমরা অত্যন্ত নিচের দিকে ছিলাম। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পরে আমাদের সূচক ছিল। এগুলো আমাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম একটি পিলার। আমরা যদি গণতন্ত্র চাই তাহলে মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।”
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেন, “স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের কথা ভাবা হয়েছে এবং সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করেই এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাকট পুনর্বিবেচনা করা হবে।”
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটা খুবই বেদনাদায়ক এবং নির্মম। এর বিচার নিয়ে কি ধরনের প্রহসন করা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। এ হত্যাকাণ্ডসহ সাংবাদিকদের ওপর যত রকম নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে সরকার ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যা যা করণীয় তা আমরা করবো।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “গণহত্যার ছবি-ভিডিও প্রকাশে সহযোগিতা করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে আহত ও নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা এবং তাদের পরিচয় জানা যাবে। তাই এসব তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করছি।”
সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন না, তাদের প্রতি যেন কোনও অন্যায় না হয় সেটা নিয়ে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, মামলা হলে সুস্পষ্ট তদন্তের ভিত্তিতে সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ছাড়া বিশেষ কারণ ছাড়া তার ছবি প্রচার না করার অনুরোধ করছি।”
এ সময় সাংবাদিকদের মধ্যে দলীয়করণ নিরুৎসাহিত করেন উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার আওতাধীন দপ্তর সংস্থার প্রধানরা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।