রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, দুবাইতে পার্টনারশিপ ব্যবসা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেসিডেন্সি থাকার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। নড়েচড়ে বসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সরকারের একজন উপদষ্টো গতকাল জানান, রাষ্ট্রপতির বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এটা দেখছে।
জাতীয় দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশতি এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, , গত মার্চে সর্বশেষ দুবাই সফর করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে সময় দুই রাষ্ট্রের যথাযথ প্রটোকলে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে দুই রাত কাটান। পরিভ্রমণ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশচুম্বী ভবন বুর্জ আল খলিফা। তার সম্মানে ছিল রিভার ক্রুজ এবং গালা ডিনারের আয়োজন। যেখানে আরব আমিরাতে বড় বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রপতিপুত্র আরশাদ আদনান রনিও অংশ নেন।
দায়িত্বশীল কূটনৈতিকদের বরাত দিয়ে মানবজমিন লিখেছে, বিদেশে প্রেসিডেন্টের সহায়-সম্পত্তি থাকার তথ্যের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর সরকারের একাধিক সংস্থা বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয় বরং সরকারের অন্য অর্গান এ নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এটা দেখছে। তিনি বলেন, কোনো এক পর্যায়ে হয়তো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা হবে, বিষয়টির আইনগত অনেক দিক আছে। প্রেসিডেন্টের নিজের ব্যাপার আছে। সার্বিক বিবেচনায় এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজে থেকে নাড়াচাড়া করতে চায় না। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জুরিসডিকশনের মধ্যেও পড়ে না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে মানবজমিন জানিয়েছে- প্রেসিডেন্টের একমাত্র ছেলে আরশাদ আদনান রনির দুবাইতে ব্যবসা রয়েছে। সেটার সূত্র ধরেই দুবাইয়ের একটি কোম্পানিতে প্রেসিডেন্টের বিনিয়োগ এবং আমিরাতে রেসিডেন্সি বা বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন তিনি। গত মার্চে রাষ্ট্রপতি চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার পথে ৩ দিন ছেলের সঙ্গে দুবাইতে কাটান। রাষ্ট্রপতি ৩ দিন দুবাইতে থাকলেও এ নিয়ে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় কোনো খবর প্রচার হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস প্রেসিডেন্টের যাত্রা এবং লন্ডনে পৌঁছার খবর প্রচার করেছিল।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিদেশে সম্পদ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। তিনি প্রেসিডেন্টের মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে দেড় লাখ রিঙ্গিত বিনিয়োগ এবং দুবাইয়ের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত ও ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামের দুবাইয়ে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের বিনিময়ে রেসিডেন্সি ভিসা পাওয়ার প্রমাণস্বরূপ কিছু ডকুমেন্ট প্রদর্শন করেন। তাছাড়া এ নিয়ে তিনি একটি অনলাইনে রিপোর্টও করেন। সেই রিপোর্টে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। বলা হয়, যদিও এসব বিনিয়োগ তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে করেছেন।
তবে প্রশ্ন উঠছে, বিদেশে এসব বিনিয়োগের জন্য কোনো অনুমতি কি আদৌ গ্রহণ করেছেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতীত মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে ১ লাখ ৫০ হাজার রিঙ্গিত ও দুবাইয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ কি বৈধ? তিনি যদি আনুগত্য মেনে অর্থের বিনিময়ে তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টও গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহাল থাকা তার পক্ষে সম্ভব হবে? সেই রিপোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বরাতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে কখনোই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেয়নি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে প্রশ্নগুলো উঠেছিল। কিন্তু জবাব মিলেনি। উপদেষ্টার কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, প্রেসিডেন্টের মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম আছে বলে যে আলোচনা চলছে সেটি সত্য কিনা? সত্য হলে এটি সাংবিধানিকভাবে কতোটা সঙ্গত? এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াকিবহাল কিনা? প্রদর্শিত ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই করা হবে কিনা? জবাব এড়িয়ে যান উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বলেন, এটা প্রেসিডেন্টের বিষয়, খুবই সেনসিটিভ। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এটা দেখুক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি যুক্ত হয়ও শেষ পর্যায়ে হবে, আর তখন দেখা যাবে।
সেকেন্ড হোম থাকার পর কি রাষ্ট্রপতি হওয়া যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ভালো বলতে পারবেন।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ২৪ এপ্রিল ২০২৩ সালে ৫ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন সাহাবুদ্দিন চু্প্পু।
বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদ স্পিকার পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা শিরিন শারমিন চৌধুরী।
ছাত্র-জনতার গণরোষে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকে পলাতক রয়েছেন শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং তার সরকারের সময় বিভিন্ন উচ্চপদের দায়িত্বশীলরা।