মে ৪, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘ঢাকায় আড়াইশ বাসের রুট পারমিট চান নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ছাত্রনেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক বণিকবার্তা।
এতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় ২৪০টি বাসের রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেছে চিত্রা পরিবহন লিমিটেড। কোম্পানিটি ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। এটির সাত পরিচালকের একজন মহিদুল ইসলাম দাউদ, যিনি একই সঙ্গে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন। দাউদ ঢাকার তিতুমীর কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে উঠে আসা এ ছাত্রনেতা বর্তমানে সক্রিয় রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের রাজনীতিতে। গণপরিবহনে হাফ ভাড়া, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন মহিদুল ইসলাম দাউদ। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে রুট পারমিট আদায়ের চেষ্টা করছেন এ ছাত্রনেতা।
রুট পারমিটের জন্য গত ৫ মার্চ ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি’ বরাবর দুটি আবেদন করা হয় চিত্রা পরিবহনের ব্যানারে। একটি আবেদনে ১২০টি বাসের জন্য কালিয়াকৈর-নারায়ণগঞ্জ রুটের (চান্দুরা, বাইপাইল, হেমায়েতপুর, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, আসাদগেট, নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলিস্তান, মাতুয়াইল, চাষাঢ়া) পারমিট চাওয়া হয়েছে। আরেকটি আবেদনে সাভার-গাজীপুর (হেমায়েতপুর, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১, কালশী, এয়ারপোর্ট, টঙ্গী ও বোর্ডবাজার) রুটের জন্য চাওয়া হয়েছে আরো ১২০টি বাসের পারমিট।
ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, বাসগুলোর রুট পারমিটের জন্য যোগাযোগ করছেন ছাত্রনেতা মহিদুল ইসলাম দাউদ। সরকারি তিতুমীর কলেজের ২০২০-২১ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষার্থী বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের’ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক। সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সংগঠক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় ২০১৮ সালে দাউদ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। সে আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০২২ সালে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতেও আন্দোলন করেছেন। সর্বশেষ সম্পৃক্ত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) নামের একটি ‘স্বেচ্ছাসেবী’ সংগঠনেও তার সক্রিয়তা রয়েছে। এ সংগঠনের ব্যানারে সরকারের পরিবহন সম্পর্কিত একটি দপ্তরের সভায়ও দাউদ অংশ নেন।
অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ততা ও সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে—এমন কথা বলে রুট পারমিটের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় চাপ প্রয়োগ করছেন দাউদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিদুল ইসলাম দাউদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার তো কোনো বাস কোম্পানি নেই। আমি মালিকই না।’
চিত্রা পরিবহনের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘সেলিম ভাই এটার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এটা তো উনি করেছেন। ওখানে তো আমি থাকার কথা না। উনি আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। উনি বলেছেন, আমি তো নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কাজ করি, তাহলে যেন ইয়ে... করি। আচ্ছা, আমি তাহলে কথা বলে জানাব।’
মালিক নন দাবি করলেও যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে কোম্পানির যে মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে, সেখানে চিত্রা পরিবহনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে মহিদুল ইসলাম দাউদের স্বাক্ষর রয়েছে। রুট পারমিটের আবেদনের সঙ্গে জমা দেয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিত্রা পরিবহনের সাত পরিচালকের মধ্যে তিনজনেরই বয়স ২৫ বছর বা তার নিচে। এর মধ্যে মহিদুল ইসলাম দাউদের পাশাপাশি নোয়াখালী সদর উপজেলার মো. ওমর ফারুক ও গাজীপুরের কাপাসিয়ার মো. আশরাফুল ইসলামও শিক্ষার্থী। কোম্পানির চেয়ারম্যান শরিফ ওয়ায়েদ উল্লাহর বয়স ৩০ বছর। আরেক পরিচালক আবুল বাশারের বয়স ৩১ বছর।
ছাত্ররা সামনে থাকলেও চিত্রা পরিবহনের মূল মালিক সেলিম সরদার নামে এক ব্যক্তি। কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্সও তার নামে। কোম্পানির কয়টি বাস আছে জানতে চাইলে সেলিম সরদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঠিকানা, মৌমিতা, লাব্বাইকসহ কয়েকটি কোম্পানিতে আমার মালিকানায় থাকা নয়টি বাস চলাচল করছে। রুট পারমিট পেলে এ বাসগুলো চিত্রা পরিবহনের নামে চালানো হবে। বাকি বাসগুলো আমরা যারা কোম্পানির পরিচালক আছি, সবাই মিলে কিনব। সবগুলো নতুন বাস নামানো হবে।’
কোম্পানিতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরিচালক হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনারা কেউ ছাত্র কিনা আমি জানি না। ব্যবসা করবে, নতুন গাড়ি কিনবে—এমন কথা বলেই আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। একটা কোম্পানি চালাতে গেলে অনেক লোক লাগে। একটা পরিবহনে যখন ২০০ গাড়ি চলে বা ১০০ গাড়ি চলে, তখন এক-দুজন দিয়ে তা সামলানো সম্ভব না। যাকে যে জায়গায় রাখলে কোম্পানি পরিচালনা সম্ভব হবে, আমরা সে জায়গায়ই তাকে রাখব।’