জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম
এমএলএম প্রতিষ্ঠান ডেসটিনির ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এমডি রফিকুল আমীন, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ১৯ জনের ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। খবর প্রথম আলো।
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক রবিউল আলম এ রায় দেন।
কারাদণ্ড পাওয়া অন্য ১৭ জন হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জসীম উদ্দিন, জাকির হোসেন, এস এম আহসানুল কবির, জুবায়ের সোহেল, মোসাদ্দেক আলী, আবদুল মান্নান ও আবুল কালাম আজাদ।
দণ্ড পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে রফিকুল আমীন, মোহাম্মদ হোসেন ও হারুন-অর-রশীদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
এর আগে ২০২২ সালের ১৫ মে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এমডি রফিকুল আমীন, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ-পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে। আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই কারাগারে আছেন মোহাম্মদ হোসেন ও রফিকুল।
মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় দণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাইদুল ইসলাম খান, সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, দিদারুল আলম, এম হায়দার উজ্জামান, জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, শফিউল ইসলাম, জিয়াউল হক মোল্লা, সিকদার কবিরুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান, সাকিবুজ্জামান, এস এম আহসানুল কবির, এ এইচ এম আতাউর রহমান, জি এম গোলাম কিবরিয়া, আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, দেলোয়ার হোসেন, জেসমিন আক্তার ও শফিকুল হক।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এই অর্থ আত্মসাতের কারণে সাড়ে আট লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অপর মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই টাকার মধ্যে এলসি (ঋণপত্র) হিসেবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা ও সরাসরি পাচার করা হয় ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
মামলা করার ৪ বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট রফিকুলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।