জুন ২৩, ২০২৫, ০১:১৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে হেনস্তার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
রোববার, ২২ জুন রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে একদল লোক তাকে বের করে আনেন এবং জুতার মালা পরিয়ে দেন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরে বিএনপির করা একটি মামলায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাতে এই প্রতিবেদন লেখার সময় তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে ছিলেন।
বিএনপি মামলা করেছে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায়। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেছে বিএনপি। সেই মামলায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।
সাবেক সিইসি নূরুল হুদার বাসা উত্তরায়। তার বাসায় ‘মব’ তৈরি করা হয় সন্ধ্যার দিকে। এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, নূরুল হুদা সাদা একটি টি-শার্ট ও লুঙ্গি পরা। তাকে ঘিরে রয়েছেন একদল লোক। তারা নূরুল হুদাকে একটি জুতার মালা পরিয়ে রেখেছেন। এক ব্যক্তিকে জুতা দিয়ে তাকে আঘাত করতেও দেখা যায়। পাশেই পুলিশ দাঁড়ানো।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, কেউ কেউ নূরুল হুদার দিকে ডিম ছুড়ে মারছেন এবং নানাভাবে তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, হেনস্তার পর নূরুল হুদাকে পুলিশে দেওয়া হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, নূরুল হুদাকে উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর প্রথম আলো।
নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে, যা পরে রাতের ভোট নামে পরিচিতি পায়।
অবশ্য নূরুল হুদাকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন। তাদের বক্তব্য হলো, নূরুল হুদার বিচার করতে হবে। কিন্তু মব তৈরি করে হেনস্তা করা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিন বলেন, সাবেক সিইসির অপরাধ প্রমাণ হলে বিচার বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে করতে হবে। তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করাটা অপরাধের কোনো শাস্তি নয়। এটা ‘মব জাস্টিস’ হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এ ধরনের কাজ শেখ হাসিনার আমলে ছাত্রলীগ করত, এখন কি বিএনপি বা অন্যান্য দলের সমর্থকেরা করবেন?
রেজাউর রহমান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার কথা বলে একই ধরনের কাজ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা অপরাধ। এই অপরাধেরও বিচার হওয়া দরকার। কিন্তু কোন আইনে? আর যে এবং যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতৃত্ব কি কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেবে?