২০২৬ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রায় ৬০টি শুল্ক লাইনের হার যৌক্তিককরণ এবং ডব্লিউটিওর নির্ধারিত শুল্ক (বাউন্ড ট্যারিফ) সীমার মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক ও অন্যান্য চার্জের যোগফল বাউন্ড ট্যারিফের সীমা অতিক্রম করেছে সেসব ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-সংক্রান্ত সরকারি একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এনবিআর ৬০টি শুল্ক লাইন চিহ্নিত করেছে, যেখানে কাস্টমস শুল্ক এবং অন্যান্য শুল্ক ও চার্জ যুক্ত হওয়ার ফলে নির্ধারিত ট্যারিফের চেয়ে বেশি হয়েছে। এসব হার ধাপে ধাপে সামঞ্জস্য করা হবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে নির্ধারিত শুল্কের আওতায় আনা হবে।’
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং দেশটি বর্তমানে এই উত্তরণের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নথিতে উল্লেখ করা হয়, দেশীয় শিল্পের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এবং রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি পর্যায়ে ধীরে ধীরে শুল্ক কমানোর কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে।
‘এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশের শুল্কহার সীমার মধ্যে আনার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) সূচি পর্যালোচনার পরিকল্পনা, ন্যূনতম আমদানি মূল্য পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করা এবং সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রক শুল্ক সহজীকরণ।’
এতে বলা হয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাংলাদেশ যে নির্ধারিত হারে সম্মত হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের ট্যারিফ রেজিমকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এনবিআর ছয়টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে।
সরকার ন্যূনতম আমদানি মূল্য বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে তা বন্ধ করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
ব্যাপক কাটছাঁটের পরিবর্তে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক এবং অন্যান্য শুল্ক ও চার্জ ক্রমান্বয়ে যৌক্তিক করা হবে, যাতে স্থানীয় শিল্প ও রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব না পড়ে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১৯১টি পণ্যে আরোপিত নিয়ন্ত্রক শুল্ক এবং ২৩৪টি পণ্যে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ‘আগামী তিন অর্থবছরে মধ্যবর্তী পণ্যের নিয়ন্ত্রক শুল্ক এবং আরোপিত সম্পূরক শুল্ক পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত বা প্রত্যাহার করা হবে।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সরকার জাতীয় শুল্ক নীতি, ২০২৩ প্রণয়ন করেছে।
জাতীয় শুল্ক নীতি, ২০২৩ গত বছরের ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই নীতির লক্ষ্য ডব্লিউটিওর নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শুল্ক কাঠামোকে যৌক্তিক করা, রপ্তানি বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করা এবং সম্ভাব্য মূল বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর সহজতর করা।
আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে, দলিল অনুযায়ী, পরিকল্পনা হচ্ছে বাণিজ্য শুল্কের উপর ব্যাপক নির্ভরতা কমিয়ে মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে প্রত্যক্ষ কর ও ভ্যাটের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া।
আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ফলে দেশের বাণিজ্যনীতির রপ্তানিবিরোধী পক্ষপাত কমবে বলে আশা করা হচ্ছে; সুতরাং, শুল্ক যৌক্তিকীকরণের ফলে রাজস্ব-সংক্রান্ত লোকসান স্থানীয় ব্যবসার শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে।
২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের কথা রয়েছে। ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।