আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫, ১১:৫৬ এএম

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম | ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর অনেকেই এ খবরটি প্রধান শিরোনামে প্রকাশ করেছে এবং একাধিক প্রতিবেদন করেছে তাঁকে ঘিরে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এখন পর্যন্ত দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।’ অন্যটির শিরোনাম—‘খালেদা জিয়া: নিহত এক নেতার বিধবা স্ত্রী থেকে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।’ প্রতিবেদনে তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছাড়াও জন্ম, রাজনীতিতে প্রবেশ এবং প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম জনসমক্ষে পরিচিত হন। ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপির নেতৃত্বে উঠে আসেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাও তাঁকে নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটির শিরোনাম—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।’ অন্যটির শিরোনাম—‘খালেদা জিয়া: বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী—ক্ষমতা ও প্রতিরোধে ভরা এক জীবন।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে, যা সে সময় ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। তাঁর বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ছিলেন ফেনির বাসিন্দা এবং দেশভাগের আগে জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পরিবারসহ তাঁরা পূর্ববঙ্গে চলে আসেন।

প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ কোনো পূর্বপরিকল্পিত উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফল নয়; বরং দেশের গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েই তাঁর উত্থান ঘটে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক বিদ্রোহে তাঁর স্বামী ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর ১৯৮২ সালের মার্চে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে আবারও সামরিক শাসন জারি হয়। এই অস্থির সময়েই খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে সামনে আসেন এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান বেসামরিক নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।’ এতে বলা হয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০৬ সালের পর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও এবং কয়েক বছর কারাবন্দি বা গৃহবন্দি অবস্থায় কাটালেও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিএনপি দেশজুড়ে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ধরে রেখেছিল। পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসন শেষে দেশে ফেরার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি খালেদা জিয়াকে নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটিতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়, অন্যটিতে ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এবং দেশভাগের পর পরিবার দিনাজপুরে স্থায়ী হয়। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে এবং পরে দিনাজপুর গার্লস স্কুলে।

পাকিস্তানের ডন, যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপি, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের জিও নিউজ, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্থান টাইমসসহ বিশ্বের নানা সংবাদমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর ইন্তেকালের খবর।

Link copied!