ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সোমবার (১০ জুন) ভোরে নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, পরপর তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে মিলিত হন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি ও এনডিএ জোটকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আবারও অভিনন্দন জানান তিনি। সেই সঙ্গে ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি ভবনে এ সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আন্তরিক আগ্রহের কথা জানান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে এবং নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। মানুষে মানুষে সংযোগ বৃদ্ধিতে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ উভয় দেশের আরও উন্নতিকল্পে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।”
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি, এস জয়শঙ্কর ও গান্ধী পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাত
নয়াদিল্লি সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই দিন সকালে ভারতের রাজধানীর আইটিসি মৌর্য হোটেলেই এই সাক্ষাতের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ইউনিয়ন মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক হয়। বৈঠক দুটির বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সে দেশের চরম অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। কৃষিখাতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি এবং পর্যটনখাতে শ্রীলঙ্কার দক্ষতা ও বিনিয়োগগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এস জয়শঙ্করের বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে এস জয়শঙ্করের আন্তরিকতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আবারও মন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান ও একসঙ্গে কাজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।”
এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইটিসি মৌর্য হোটেলে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পার্লামেন্টের রাজ্যসভা সদস্য ও কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, তার পুত্র ও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং কন্যা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে এ সময় একান্তে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ১৮তম নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের ২৯৩টিতে বিজয়ী এনডিএ জোটের নেতা নরেন্দ্র মোদির পর পর তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যতম শীর্ষ বিশ্বনেতা হিসেবে আমন্ত্রিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে দিল্লি পৌঁছান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (ওভারসিজ ইন্ডিয়ান এফেয়ার্স) রাষ্ট্রদূত মুক্তেশ পরদেশী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও লাল কৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে সাক্ষাত
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সিনিয়র নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে তার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ৯৬ বছর বয়সের এল কে আদভানির সঙ্গে পূর্বস্মৃতিচারণ ও ব্যক্তিগত আলাপ করেন।
এরপরই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে শেখ হাসিনা ভারতের মধ্য দিয়ে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ও এ জন্য প্রয়োজনীয় ত্রিপক্ষীয় চুক্তি নিয়ে এর মধ্যেই ভারতের সঙ্গে আলোচনার কথা জানান।
এদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে সারাবিশ্ব থেকে আগত প্রায় ৮ হাজার অতিথির সঙ্গে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার কন্যা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান তার সঙ্গে ছিলেন।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি থেকে ঢাকা রওনার কথা আছে।