এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে কাতারকে জোরালো ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এ কাজে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিকে সক্রিয় করে তুলতে কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউনূস বলেন, “আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। কাতার ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”
বুধবার, ২৩ এপ্রিল কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ভূমিকা নিয়ে তার এই মতামত তুলে ধরেন।
‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ‘ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে’ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টায় রোহিঙ্গাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন।”
এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউনূস।
বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন সমস্যার জেরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে ‘সরে যাচ্ছে’ বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা তুলে ধরে ইউনূস বলনে, “চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ জনের তালিকার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং এর মধ্যে ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৮ জনকে ‘মিয়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে’।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক বিবেচনায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মনে করে, টেকসই প্রত্যাবাসনই হলো বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান।
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মিয়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত সংস্থার (আইআইএমএম) চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়। বাংলাদেশ বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে টেকসই প্রত্যাবাসনকেই বিবেচনা করে।”
মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে বিশ্ববাসীকে ‘এগিয়ে আসার’ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।”