রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস

গণহত্যার বিচার চাইলেন রোহিঙ্গারা, জানালেন দেশে ফেরার আকুতি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম

গণহত্যার বিচার চাইলেন রোহিঙ্গারা, জানালেন দেশে ফেরার আকুতি

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে পথসভা, মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে জেলার উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের ফুটবল খেলার মাঠে ২৫ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার আকুতি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবি জানান।

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট জন্মভিটা ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে। ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ আগস্ট দিনটি ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। খবর প্রথম আলো।

দিবসটি পালনে আজ সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১৫টি আশ্রয়শিবিরে মানববন্ধন, পথসভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪) ফুটবল খেলার মাঠে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা জড়ো হন।

সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলার ইনানী সৈকতের একটি হোটেলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন থাকায় সকাল ১০টার দিকে তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করা হয়।

সকাল নয়টার দিকে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাথায় নানা দাবিসংবলিত ফিতা ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে জড়ো হয়েছেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণ পরপর মিছিল করে সমাবেশে নানা বয়সী মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। সমাবেশে অনেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়া নিজেদের স্বজনদের ছবিও নিয়ে আসেন। প্ল্যাকার্ডগুলোতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধানের বিচার দাবি করা হয়।

সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কী করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভবতা আন্তর্জাতিক মহলকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রত্যাবাসন করলে আরাকান আর্মির বাধার মুখে পড়তে হবে রোহিঙ্গাদের।

আরেক রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, রাখাইনের সেই গণহত্যার দৃশ্য রোহিঙ্গারা এখনো ভুলতে পারছেন না। সেদিন চোখের সামনে সামরিক বাহিনী গুলি করে হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর গুলিতে পঙ্গু হয়ে শত শত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার যে মামলা চলমান রয়েছে, তার প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটিই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশা। 

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রোহিঙ্গারা সবাই নিজ দেশে ফিরতে চায়, নিজেদের সুরক্ষা চায়, তাদের সহায়-সম্পত্তি ফেরত চায়। রাখাইনের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে সেখানে স্থিতিশীল অবস্থা জরুরি। নইলে রোহিঙ্গাদের বারবার একই সংকটে পড়তে হবে। সমাবেশে রাখাইনে নিহত রোহিঙ্গাদের স্মরণে মোনাজাত করা হয়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা টেকসই-মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আইসিজে এবং আইসিসিতে যে বিচারকাজ চলছে তার নিষ্পত্তি চেয়েছেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার এসেছে গত ১৮ মাসে। নিবন্ধিতদের বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

Link copied!