জুলাই ২৬, ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়া কিংবা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ‘জনবিস্ফোরণ রোগের উপসর্গমাত্র’ বলে উল্লেখ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে এই আন্দোলনকে ঘিরে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ বা নিরপেক্ষ তদন্ত, পাইকারিভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে এই ‘জনবিস্ফোরণ’কে ‘রোগের উপসর্গ’ আখ্যায়িত করে সুজন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আমরা মনে করি, সরকারের উচিত কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মানুষ কেন এত ক্ষুব্ধ সেটা বোঝার চেষ্টা করা। আমাদের আশঙ্কা, এই জনবিস্ফোরণ রোগের উপসর্গমাত্র। মূল রোগ ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার না পাওয়ার বঞ্চনা। স্থায়ীভাবে সংকটের নিরাময় ঘটাতে হলে উপসর্গের নয়, রোগের চিকিৎসা আবশ্যক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে খেয়াল করছি যে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জের ধরে সৃষ্ট অচলাবস্থা এখনও নিরসন হয়নি। সহিংতায় মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছেই।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। সরকারিমহলের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। এতে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি দেখা গেছে বলেও আমরা মনে করি। কোনও স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে কোনও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এত প্রাণহানি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, প্রতিটি প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। কোনওকিছুর বিনিময়ে সেটা পূরণ হওয়ার নয়।
এতে আরও বলা হয়, আমরা নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে সবগুলো হত্যার নির্মোহ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আরও মনে করি, আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালানো এবং সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া কোনওভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য ও প্রস্তুতি বাড়ানো দরকার বলেও আমরা মনে করি।
বিজ্ঞপ্তিতে যোগ করা হয়, কিছুটা দেরিতে হলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে কোটার সংস্কার করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এ আন্দোলনকে ঘিরে যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আর নতুন করে হয়রানি না করা হয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
সুজন আরও বলেছে, আমরা মনে করি, বর্তমান লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয় এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ছাত্রনেতাদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়, যা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) (সংশোধিত) অধ্যাদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী নিবন্ধিত দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাখা বেআইনি। ড. শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদকালে সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে এ বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়, যা রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তাই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান ঘটানো ও তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।
আরও বলা হয়, আমরা মনে করি, সরকারের উচিত কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মানুষ কেন এত ক্ষুব্ধ সেটা বোঝানোর চেষ্টা করা। আমাদের আশঙ্কা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে জনবিস্ফোরণ রোগের উপসর্গমাত্র। মূল রোগ হলো ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার না পাওয়ার বঞ্চনা। তাই স্থায়ীভাবে সংকটের নিরাময় ঘটাতে হলে উপসর্গের নয়, রোগের চিকিৎসা আবশ্যক।
সুজনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই লক্ষ্যে সব অংশীজনকে, বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনতিবিলম্বে সংলাপের আয়োজন ও এসব গুরুতর সমস্যার টেকসই একটা সমাধানে পৌঁছাতে সরকারকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ও তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে সব ধরনের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।