আগস্ট ৮, ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম
প্রায় পাঁচ বছর আগে কার্যকর হওয়া বহুল আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা Digital Security Act-2018 অবশেষে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এ তথ্য জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “ওই আইন সংস্কার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে সরকারের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা এর আগেও বলেছিলাম যে—সরকারের সমালোচনাকারীদের আটক, গ্রেপ্তার এবং মুখ বন্ধ রাখার জন্য এ আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছিল।”
সাইবার সিকিউরিটি আইন’ আন্তর্জাতিক মানের হওয়ার ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র সজাগ রয়েছে জানিয়ে ম্যাথু মিলার আরও বলেন, “আমরা সরকারকে উৎসাহিত করব সংশ্লিষ্ট সবাই যেন ওই আইনের খসড়ার পর্যালোচনা করতে পারে এবং মতামত দিতে পারে।”
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের (কেবিনেট) এক বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আানসুল হক বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে না, পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর অনেকগুলো ধারা সংশোধন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে নতুন একটি আইন করা হবে- মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
আইনমন্ত্রী জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে নতুন যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে সেখানে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মানহানির অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল। নতুন আইনে সেখানে পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।
অনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ আইনের বহু ধারা নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হবে। কিছু ধারায় বড় সংশোধনী আনা হবে। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন হলেই হলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, চরমপন্থা, সন্ত্রাসী প্রচারণা এবং ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণার বিস্তার বন্ধ করার জন্য ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গৃহীত হয়েছিল। একই বছরের ৮ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়।
আইনটি পাশ হওয়ার পর থেকে বিশেষ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের জন্য ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
আইনটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ হয়েছে ভিন্নমতের রাজনীতিক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও এ আইনের আনুপাতিক ব্যবহার বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে র্দীঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সমালোচনা করেছে। এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের জন্য দেশের সাংবাদিক সমাজও সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছে আসছিল।
তাছাড়া,সম্প্রতি ঢাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার অগে সংবাদ সম্মেলনে ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে যান।