আগস্ট ২৯, ২০২৩, ০৯:২০ পিএম
বাংলাদেশের আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ভিসানীতিসহ নানামুখী চাপ প্রয়োগ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের এই চাপের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। ঢাকার সাথে বেইজিংয়ের এই সম্ভাব্য ঘনিষ্ঠতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না নয়াদিল্লি। একারণে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ আগস্ট) ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশটির সরকারকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ‘চরমপন্থি শক্তির’ হাতকে শক্তিশালী করবে। এর ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে। এবিষয়টি এরই মধ্যে ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের কূটনৈতিক মহলের একাধিক সূত্র এসব তথ্য হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না-করার শর্তে ওইসব সূত্র দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে জানায়, সম্প্রতি একাধিক দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। নয়াদিল্লির বিশ্বাস, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ দিচ্ছে তা বাংলাদেশকে ‘চীনের আরও কাছে ঠেলে দিতে পারে’। আর তেমনটি হলে তা এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা দাবি করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি চাপ দেওয়া হলে তা শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী চরমপন্থি ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে বলে তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও সংস্থাটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সম্প্রতি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞারও হুমকি দিয়েছে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে, ভারত আশঙ্কা করছে-যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। গত ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ভারতকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
হাসিনা-শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ি প্রেসিডেন্ট জিনপিং বলেছেন, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে চীন এবং পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করবে বেইজিং।
হিন্দস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেখ হাসিনা প্রশাসনের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করতে তা বিরোধী দল বিএনপিকে উৎসাহিত ও সংগঠিত করছে। এ ছাড়া বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার বিষয়টিও উদ্বেগের সাথে দেখছে নয়াদিল্লি।
হিন্দুস্তান টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কথা উঠে এসেছে। ঢাকায় গত ১০ বছরের মধ্য গত ১০ জুন প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির আন্দোলনে একসাথে থাকা এই দলটি ‘ভারতবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই পাকিস্তানের সাথে সব সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত বিশ্বাস করে জামায়াতের শক্তিশালী হয়ে ওঠা ‘চরমপন্থি শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে।