সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৭:০৮ পিএম

সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ শেষে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন শিক্ষকরা। ছবি: সংগৃহীত

চলমান ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’কে ঘিরে জুলাই জুড়ে সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া সারা দেশে হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক-হয়রানি বন্ধ ও আটকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষক।

সোমবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়।

সেই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবির প্রতি সমর্থনও জানান ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’র শিক্ষকরা। সমাবেশের শুরুতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সমাবেশের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ ভাবা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের খোলনলচে পাল্টে দিতে এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫ দশকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রে যে লাগাতার নৈরাজ্য চলেছে, হলগুলোয় যে সুপরিকল্পিত নিপীড়ন চলেছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের- সবকিছু পাল্টে নতুন ইতিহাস লেখার পথ তৈরি করেছেন এই শিক্ষার্থীরা।”

এ সময় চলতি মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, “ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা জেনেও যদি প্রতিবাদ না করা হয়, সেটি হবে অন্যায়। গণমাধ্যমে শুধু একদিকের বিবরণ (ন্যারেটিভ) প্রচার করা হচ্ছে যে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু জানতে হবে, প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে মানুষ। যখন ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলি করা হয়, ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কোনও শিক্ষক ঘরে বসে থাকতে পারেন না। এই নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।”

সমাবেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, “১৯৬৯ সালে অধ্যাপক শামসুজ্জোহা ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। এখানে যারা (শিক্ষক) জমায়েত হয়েছেন, তারা শহীদ শামসুজ্জোহারই উত্তরসূরি। আর শিক্ষার্থীরা যে অধিকারের জন্য, যে বৈষম্যহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, লড়াই করছেন, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, “অযথা মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে আনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিন। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় ফিরে আসতে দিন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুন। স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় থেকে দেশের উন্নয়ন তো দূরের কথা, দেশের মানুষের কাছেও কোনো দিন পৌঁছানো যাবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ডিসিপ্লিনের শিক্ষক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদারসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জমায়েতস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে যান। সেখান থেকে তারা আবার অপরাজেয় বাংলায় ফিরে আসেন। সমাবেশ শুরুর আগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন শিক্ষকরা। পরে সেখান থেকে অপরাজেয় বাংলার সামনে আসেন তারা।

Link copied!