মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ‘টাটমা-ড’। পাঁচ লাখ সদস্যের বিশাল জনবল তার। গত ৭২ বছর ধরে বিশ্বখ্যাত অনেক গেরিলা বাহিনীর স্বাধিকারের সংগ্রাম ঠেকিয়ে তারা রক্ষা করেছে ‘ইউনিয়ন-মিয়ানমার’-এর অখণ্ডতা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো ছারখার করার মাধ্যমে দমনপীড়নের নৃশংস রূপ দেখিয়েছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। সেই গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা। আর চলমান যুদ্ধের কারণে আবারও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয়ের মিছিল।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের বড় অংশ বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। পালংখালী, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর বিপরীতে। গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার তুমব্রু সীমান্তে যে লড়াই চলছে তারই ফলশ্রুতিতে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ অর্থাৎ বিজিপির শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিজিপি সদস্য ছাড়াও সীমান্তের ওপার থেকে আহত সেনাসদস্য ও আরাকান আর্মির সদস্যদেরও আসতে দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন চার শতাধিক চাকমা।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির দলকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় সামরিক বাহিনী।
২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ - এই তিন বাহিনী হলো- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
এই অ্যালায়েন্সের আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী যারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সশস্ত্র বাহিনীর বিপক্ষে এই বিদ্রোহীরাই চালিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধ। জান্তা সরকারের বিশাল জনবলও এখন হার মানছে নবীন আরাকান আর্মির কাছে। এ লড়াইয়ের মধ্যেই দেশটির সেনাবাহিনী ছেড়েছেন কয়েক হাজার সেনা। যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও।
দিনরাত চলমান লড়াইয়ের গোলাগুলিতে আতঙ্ক ও বিপদ মাথায় নিয়ে দিন যাপন করছেন সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা। মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারশেলে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের, আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন অনেকে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয় হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জানিয়েছেন, জান্তা শাসনামলের ৩ বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে লড়াই-সংঘাতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।