টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা সেই কলেজছাত্রী জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই কলেজছাত্রী নিজের ওপর হামলার আশঙ্কার কথা জানান।
ওই কলেজছাত্রীর অভিযোগ, মনজুর হোসেন এলাকার মাদকাসক্ত লোকজনদের দিয়ে তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করছে। নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। যেকোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
লিখিত বক্তব্যে ওই ছাত্রী বলেন, ‘মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি আমার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেছেন, যা সিআইডি তদন্ত করছে। সেই মামলায় দ্বিতীয় সাক্ষী করা হয়েছে আমার গ্রামের এক ব্যক্তিকে। যার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদক, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মামলা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মনজুর হোসেন দিনের পর দিন আমার ছবি এডিট করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া নাম সর্বস্ব কিছু অনলাইন পত্রিকায় ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ অক্টোবর এই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে বলেন, মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে তিনি তার সরকারি বাসভবনে ডেকে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
পারিবারিকভাবে তার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হলে তিনি বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলেন। মনজুর তখন তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তারা দুই মাস থাকেন।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে (কলেজছাত্রী) নিয়ে মনজুর হোসেন ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে থাকার সময় তরুণী পাসপোর্ট দেখে জানতে পারেন, মনজুর বিবাহিত। ওই বছরের ৫ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন। এর পর থেকে মনজুর তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
এদিকে, কলেজছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তদন্তে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে মনজুর হোসেনের অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইলের ইউএনও থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৪ মার্চ ইউএনও হিসেবে তাকে কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলায় পদায়ন করা হয়। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়।