আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন থেকেই নানা ‘কলাকৌশল’ ও ‘ফন্দিফিকির’ শুরু করেছে বলে মনে করছে বিএনপি। গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে ইভিএমে সংসদ নির্বাচন করার যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সেটি ওই কলাকৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনা, সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের দেওয়া আশ্বাসকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। বিষয়টি কার্যত বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ফাঁদে ফেলার নতুন ‘ফন্দি’।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান হচ্ছে, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।’ শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সংসদ নির্বাচন ৩০০ আসনেই ইভিএমে করার ইঙ্গিত দেন। এরপর একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ অবস্থায় ইভিএমই আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন নির্বাচনী কৌশল কি না, তা নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী বিভিন্ন দলে আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ, গত দুটি সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ ও ২০১৮ সাল) আওয়ামী লীগের কৌশল আগে থেকে ধরতে পারেনি অন্য দলগুলো। বিরোধী দলের আন্দোলন ও বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত করা হয়। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিলেও ভোটের আগের রাতের ‘কৌশল’ ধরতে পারেনি বিএনপি—এমন আলোচনা রাজনীতিতে রয়েছে। এবার সরকার কোন কৌশলে এগোচ্ছে, তা এখনো বিএনপিসহ বিরোধীদের কাছে পরিষ্কার নয়।
যদিও ইভিএম নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইভিএম তো পরের কথা, নির্বাচনে আমরা যাবই না শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন।’ বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তাঁদের ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে এ সরকারের বিদায় এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন। এর বাইরে তাঁরা অন্য কিছু চিন্তা করছেন না। নির্বাচন প্রশ্নে এই সরকারের কোনো কথায় তাঁদের আস্থা নেই।
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তারা (সরকার) দেশে এমন পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে একজন মন্ত্রীর বউয়ের ফোনে সরকারি কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়; সেখানে সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এটা বোকাও বিশ্বাস করে না।’ রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে, গত দুই নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, সেভাবে আগামী সংসদ নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। গত দুই নির্বাচন নিয়ে সরকার দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপে আছে। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু করা নিয়েও সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে সরকার। ইভিএমে নির্বাচনের ইঙ্গিত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস তারই একটা কৌশল হতে পারে বলে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলে আলোচনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, এই সরকারের বদলে কেয়ারটেকার আর ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন আলোচনা আছে, নির্বাচনের আগে সরকার গতবারের মতো আবারও আলোচনার আহ্বান জানাবে। বিরোধী দলকে নানা আশ্বাস দেবে। এর সবই হবে লোক দেখানো। আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কথায় আস্থা ও বিশ্বাস না রাখার বিষয়টি ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে নিয়মিতই বলে আসছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা সভা-সমাবেশ দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে, এদের (আওয়ামী লীগ সরকার) কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন।’