রোগীদের দুর্ভোগ নিরসনের কথা মাথায় রেখে খুলনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী পুলিশের এএসআইকে গ্রেপ্তারের শর্ত দিয়ে এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান খুলনার বিএমএ সভাপতি শেখ বাহারুল আলম। শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় বিএমএ ভবনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
বাহারুল বলেন, সকালে চিকিৎসক নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। সেখানে তারা চিকিৎসকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, দাবি পূরণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। রোগীদের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য তারা কাজে যোগ দিচ্ছেন।
একই কথা জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
এর আগে এক চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএমএ খুলনা শাখার ডাকে বুধবার সকাল ৬টা থেকে জেলার সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল-ক্লিনিকে কর্মবিরতি করছিলেন চিকিৎসকরা।
কর্মবিরতিতে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। এতে স্থবির হয়ে পড়ে জেলার চিকিৎসা কার্যক্রম। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা খুলনা সার্কিট হাউসে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানার নেতৃত্বে একটি দল খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন, খুলনা রেঞ্জ পুলিশ ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত ডিআইজি, অতিরিক্ত পুলিশ মিশনার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, ডেপুটি সিভিল সার্জন উপস্থিত ছিলেন।
তবে ওই সভায় বিএমএর কেউ উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, আমরা শুধু কর্মস্থলের নিরাপত্তাটুকু চেয়েছি। চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি গ্রেপ্তার এবং তার নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হাওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
বাহারুল জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গীরা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। অপারেশন থিয়েটারেও ভাঙচুর চালান তাঁরা। এক মাস আগে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার কথা বলে তাঁরা এই হামলা চালান।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, এ ঘটনায় তাঁরা মঙ্গলবার নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো চিকিৎসকের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।
বুধবার দুপুরে চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে একই থানায় পাল্টা মামলা করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।
পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও অগ্নিদগ্ধ এক মেয়ে শিশুর মা ওই নারী খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি ওই চিকিৎসকের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার ছয় বছরের মেয়ে অপচিকিৎসার শিকার। তার বাম হাতের আঙুলে পচন ধরেছে এবং একটি আঙুল পড়ে গেছে। তারপরও আমার মেয়েকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। দিনদিন তার হাতের অবস্থার চরম অবনতি হচ্ছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক জানান, ওই চিকিৎসকের ওপর হামলার মামলার আসামি এএসআই নাঈমুজ্জামানকে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।