ওয়েলফেয়ার সেন্টার গঠন

করোনার সময় প্রবাস ফেরত নারী-পুরুষ পাবেন নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ

বিশেষ প্রতিবেদক

জুলাই ৩০, ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম

করোনার সময় প্রবাস ফেরত নারী-পুরুষ পাবেন নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ

সংগৃহীত ছবি

কোভিড-১৯ মহামারীতে যেসব প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং পুনরায় প্রবাসে যাননি ও আর্থিকভাবে কষ্টে আছেন এমন ২ লাখ নারী-পুরুষ নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ পাবেন।

সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্পের আওতায় এ আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।

প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ প্রবাসফেরত নারী-পুরুষের প্রত্যেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ পাবেন। এছাড়াও যারা শারীরিকভাবে সক্ষম ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পুনরায় কর্মে যোগ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে আগ্রহী তাদের দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। এজন্য এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা।

রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) শিরোনামে এ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে রবিবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৩টায়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্প পরিচালক মোশাররাত জেবিন জানান, প্রকল্পের উদ্বোধন হবে আজ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিকভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এমন প্রবাসফেরত ব্যক্তিগণ সহায়তা পাবেন।

সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল কাদের দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০টি অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। এসব অফিস ওয়েলফেয়ার সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। প্রতিটি সেন্টার যে জেলায় অবস্থিত সেটিসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে প্রবাসফেরত নারী ও পুরুষদের খুঁজে বের করে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসবে।

তিনি জানান, ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে বিদেশফেরত কর্মীদের নগদ প্রণোদনা, আত্মকর্মসংস্থানে সহযোগিতা, ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, কাউন্সেলিং, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা, দক্ষতা সনদ প্রদান, কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা এবং কল্যাণমূলক অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।

আব্দুল কাদের বলেন, প্রত্যাগত কর্মীদের রেজিস্ট্রেশনের পর মনো-সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলিং প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে কর্মী কী ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত এবং আত্মকর্মসংস্থানে কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া  প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সার্ভিস ম্যাপিং করা হবে। যাতে করে কর্মীরা জানতে পারে কোন এলাকায় কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশফেরত কর্মীদের একটি তথ্যসমৃদ্ধ ডাটাবেইজ তৈরি হবে, যা বাংলাদেশে প্রথম। ২০২০ সাল থেকে করোনার কারণে ফেরতকর্মীদের প্রকল্প সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। তবে ২০১৫ সাল হতে ফেরত কর্মীরাও প্রকল্প সুবিধার অন্তর্ভূক্ত হবেন বলে প্রকল্পের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান।

করোনা মহামারীতে বিদেশ থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী। প্রত্যাগত এসব কর্মীর বেশিরভাগই কর্মহীন। তাছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা অর্থকষ্টসহ সমাজে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিদেশফেরত বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে সমাজে অস্থিরতাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে কোভিডের কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের রিইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টের চুক্তি সই হয়। 

প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০ জেলায় চালু হচ্ছে ওয়েলফেয়ার সেন্টার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর জেলার জন্য একটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য একটি ওয়েলফেয়ার সেন্টার হবে। ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোর, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পটুয়াখালী, খুলনা, রাঙামাটি এবং কুমিল্লায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার হবে।

মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং সাব-কনসালট্যান্ট হিসেবে আছে সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে— ব্র্যাক, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু),  কাটনারপাড়া, বিএনএসকে এবং প্রত্যাশী।

Link copied!