সোমবার (২৭ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’ এবং ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনকে সামনে রেখে তীব্র যানজটে স্থবির রাজধানী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তীব্র জটের পাশাপাশি ঢাকায় প্রবেশ সড়কগুলোতে ছিল বাড়তি যানবাহনের চাপ।
লকডাউনকে সামনে রেখে অনেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বের হয়েছেন ঘরের বাইরে। সেই সঙ্গে 'জুন ক্লোজিং' ও সপ্তাহের প্রথম দিনকে সামনে রেখে শহরের কর্মজীবীরা অধিকাংশরা বেড় হয়েছে আজ। এ ছাড়াও লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় অনেকেই ছুটছেন নিজ গ্রামের দিকে। ফলে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পথেও সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
সড়ক পথে তীব্র যানজটের কারণে ফার্মগেট সিগন্যালে অন্যদিনের তুলনায় প্রায় ১৫ মিনিট বেশি সময় লাগছে। একই ভাবে বেশি সময় লাগছে কারওয়ান বাজার, বাংলামটর ও মৌচাকে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মালিবাগ মৌচাক এলাকায় ফ্লাইওভারেও আটকে আছে গাড়ি।
ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর যাওয়ার সড়কটিতেও ছিল তীব্র যানজট। এ ছাড়াও মোহাম্মদপুর, মিরপুর, রামপুরা, খিলগাঁও ও মুগদার মত আবাসিক এলাকাগুলোতে বাসা পরিবর্তন করতে দেখা গেছে অনেককে।
মিরপুর মাটিকাটা এলাকা থেকে বাসা পরিবর্তন করে মিরপুর-৬ এ আগামী মাসে নতুন বাসায় ওঠার কথা সৈয়দ সায়েমের। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করায় চারদিন আগেই বাসা পরিবর্তন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। রামপুরা বনশ্রীর বেশ কিছু সড়কে বাসা পরিবর্তনের জন্য ট্রাক নিয়ে বেড় হতে দেখা গেছে অনেককে।
এদিকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারে যানজট না থাকলেও যানজট রয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, সদরঘাট মোড় ও যাত্রাবাড়ী মোড়ে।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে বেড় হওয়ার আরেকটি রুট গুলিস্তানকে কেন্দ্র করেও সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। সচিবালয়ের সামনে থেকে শুরু করে সিগনালে গাড়ি আটকে রয়েছে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু করে শাহবাগ পর্যন্ত গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।
রাজধানী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ উত্তরায় সকালে দেখা গেছে ঢাকায় ফেরার ভিড়। এদিকে দুপুর গড়াতেই সেই ভিড় দেখা গেছে ঢাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে। একই চিত্র দেখা যায় চিটাগাং রোডে। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে এই রুটে গাড়ির তুলনায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। যেই যানবাহনই মিলছে, তাতে চরেই রাজধানী ছাড়তে মরিয়া মানুষ।
ঢাকা থেকে বাহিরে যাওয়ার জন্য মূল সড়কগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এর সুবিধা ভোগ করছে পণ্যবাহী বিভিন্ন পরিবহন। ট্রাক, লড়ি এবং পিকআপে করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
ঢাকা থেকে বরিশালে যাবেন রামপুরার রাকিব। ঢাকার সীমান্তবর্তী এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকার পরও কিভাবে গ্রামে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখান থেকে মাওয়া ঘাঁট পর্যন্ত বাসে যাওয়া যাবে। সেখান থেকে পণ্য গাড়ি বহন করা ফেরিতে করে ওপারে গিয়ে ফরিদপুর উঠবেন তিনি। জেলার ভেতরের রাস্তা দিয়ে পৌঁছবেন ভাঙ্গায়। সেখান থেকে ব্যাটারি গাড়ি, রিকশা, ভ্যান ও পিকআপে করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে মাদারীপুরের ভেতরের সড়ত গুলো দিয়ে পৌঁছবেন গ্রামে। তিনি বলেন, 'গত ঈদেও গ্রামে যেতে পারিনি। এবারের ঈদে বাড়িতে থাকতে চাই। এ কারণে বেতন অগ্রিম নিয়ে চলে যাচ্ছি।'
বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে হওয়া বিস্ফোরণের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি মূল সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এদিকে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলো লকডাউন শেষে আবারও ঢাকায় প্রবেশ করবে। এর মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।