থানাকে অবহিত করবো কেন? থানার গাড়িওতো রাখতে হবে। তারা মামলার গাড়ি রাখবে কই?। এটা কোন দখলের বিষয় না। থানার মামলার গাড়ি ড্যাম্পিং কইরা রাখছে। তাতে আপনার সমস্যাটা হইছে কি? মিরপুরের গোলারটেক মাঠ দখলের বিষয় জানতে চাইলে এভাবে প্রতিক্রিয়া জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) মোজাম্মেল হক।
চার একর জায়গার উপর মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ গোলারটেক মাঠ। কিন্তু দিনে দিনে মাঠের চারপাশ দিয়ে প্রায় এক থেকে দেড় একর জায়গা দখল হয়ে গেছে। একপাশে দারুস সালাম থানার জব্দ করা বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস, অন্যপাশে জিবি এইচ বি ও সূচনা সমবায় নামে দু’টি ক্লাবঘর। এছাড়াও একটি অংশ ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য নেট দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে ঢুকতেই দক্ষিণ পাশে পড়ে রয়েছে থানার জব্দ করা ১০টি ট্রাক ও ৬টি বাস। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, লেগুনা, মোটরসাইকেলসহ প্রায় ৫০টির বেশি যানবাহন পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে মাঠটির পশ্চিম পাশেই একটি বড় জায়গা নিয়ে ক্লাব দু’টি অবস্থিত। ক্লাব দু’টি থেকে একটু সামনে এগালেই চোখে পড়ে একটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট। এটি নেট দিয়ে পুরোপুরি ঘেরাও করে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মাঠটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে শিশুদের খেলার জন্য একটি স্থান আছে। ওইস্থানে কিছু খেলার সরঞ্জামও রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন যত্ন না নেওয়ায় সরঞ্জামগুলোর মধ্যেও মরিচা পড়েছে।
২০০৮ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর থানার কিছু অংশ নিয়ে দারুস সালাম থানার যাত্রা শুরু|স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানে জব্দকৃত গাড়ি রাখা হচ্ছে। মোহাম্মদ রোমেল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এই মাঠটা এই এলাকার সবচেয়ে বড় মাঠ। দূরদুরান্ত থেকে ছেলে-মেয়েরা এখানে খেলতে আসে। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, ঈদের নামাজ থেকে শুরু করে সকল ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই মাঠে হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক ও বাস রাখা হয় এখানে। এতে মাঠের পাঁচ ভাগের এক ভাগ জায়গায়ই দখল হয়ে গেছে। থানা পুলিশ এটাকে যেন তার সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করে। এদের কারণে শিশু-কিশোরদের খেলার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।
গোলারটেক মাঠে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলা করে থাকে সায়েম হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “মাঠে যেভাবে গাড়ি রাখা হয় দেখলে মনে হয় এটি থানার ডাম্পিং স্টেশন। এভাবে গাড়ি দিনের পর দিন পড়ে আছে কিন্তু গাড়ি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। দুই মাস আগে মাঠের মাঝখানে বেড়া দেয়া হয়েছে। যাতে আমরা এর বাইরে না যাই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু গাড়ির মাধ্যমে দখল নয়, জিবি এইচ বি ক্লাব আর সূচনা সমবায় সমিতির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুমের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এ দুটি স্থাপনার কারণেও মাঠের অনেকাংশ বেদখল হয়ে গেছে।
মাঠের বিষয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বার বার চিঠি দেয়ার পরও তারা কোনো সমাধান করছে না বলে জানান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম।
তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “গাড়িগুলো সরানোর জন্য আমরা বার বার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি| শুধু আমি নয় মেয়র মহোদয়ও তাদের এখান থেকে গাড়ি সরানোর কথা বলেছেন। গাড়ি সরানোর কথা বললেই তারা আমাদের করার কিছু নেই। উপরে জানান।”
অত্যন্ত ক্ষোভ প্র্রকাশ করে এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরও বলেন, “ কত উপরে জানাবো আমরা। উপরের তো একটা শেষ আছে। কবে তারা জায়গা পাবে আর কবে তারা এখান থেকে সরাবে-কিছুই জানায় না।”
তবে ক্লাব ও সমিতির পক্ষে সাফাই গেয়ে কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম বলেন, “মাঠের কোন সমস্যা করছে ন। ক্লাব ও সমিতি এলাকার জনগণের কল্যাণে করা হয়েছে।একসময় এখানে বস্তি ছিল, হোটেল ছিলো। সেই বস্তি ও হোটেল উচ্ছেদ করে মাঠ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে এই ক্লাব ও সমিতি। তারা থাকায় মাঠ কেউ দখল করতে পারছে না| সরকারের প্রয়োজন হলে সাথে সাথে ক্লাব ও সমিতি তাদের জায়গা ছেড়ে দেবে। ক্লাব-সমিতি মাঠের জন্য কোন সমস্যা নয়।”
এদিকে, মাঠে রাখা গাড়িগুলো তাদের নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে দারুস সালাম থানা কর্তৃপক্ষ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এখানে থানার কোন গাড়ি নেই। এখানে সব কোর্টের আলামত রাখা হয়েছে। এ বিষয় জানতে চাইলে সিটি করপোরেশন বা কোর্টের সাথে যোগাযোগ করুন।”
গাড়ি সরানো সংক্রান্ত সিটি করপোরেশন থেকে কোনো চিঠি থানা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে থানার ওসি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে ফোনে ও মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ওসির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মাঠে থানা কর্তৃপক্ষের গাড়ি সরানোর বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) মোজাম্মেল হক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “কেন? অবহিত করবো কেন? থানার গাড়িওতো রাখতে হবে। তারা মামলার গাড়ি রাখবে কই? এটা কোন দখলের বিষয় না। থানার মামলার গাড়ি ড্যাম্পিং কইরা রাখছে। তাতে আপনার সমস্যাটা হইছে কি? আমি অবহিত করবো কেন তাকে। মেয়র মহোদয়, আইজি, ডিআইজি সবাই এ বিষয়টি জানে। গাড়ি কই আছে কিভাবে আছে সবাই সব কিছু জানে।”
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আর থানা প্রশাসন যাই বলুক,মাঠ শিগগির দখলমুক্ত হোক।আবার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠুক খেলাধুলার আদর্শ জায়গা হিসেবে-এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।