আবারও নিজ এলাকার দাবির ব্যাপারে সোচ্চার হলেন স্যোশাল মিডিয়ার আলোচিত মুখ আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে মালামাল ও জনবল প্রত্যাহারসহ ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, এক শ্রেণির লোক সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করছেন। তারা চায় না বগুড়া স্টেডিয়াম থাক। স্টেডিয়ামটি অকার্যকর করে জুয়া, মেলা ও গরুর–ছাগলের হাট বসানোর পাঁয়তারা চলছে। চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিল এবং মালামাল সরানো নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) সমালোচনা করেছেন হিরো আলম। মালামাল ফেরত চেয়ে মাঠটিতে আগের মতো খেলা চালুর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ফটকে আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্টেডিয়ামটি নিয়ে কথা বলেন হিরো আলম। পরে তিনি স্টেডিয়ামে চলমান প্রিমিয়ার লিগের খেলা দেখেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা একটা শ্রেণির হয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, ‘একটা শ্রেণি চাচ্ছে না, মাঠটিতে খেলাধুলা হোক। খেলাধুলা যদি হয়, তাহলে তো মাঠটা চাঙা থাকবে। তারা এমন গোপনীয়তার সাথে কাজ করছে, চিঠি দিচ্ছে যাতে এখানে খেলা না হয়। তখন দেখা যাবে বছরের পর বছর মাঠটা পড়ে থাকবে। তখন মাঠ গরু–ছাগলের হাট করার জন্য দেবে, জুয়া খেলার জন্য, মেলা করার জন্য দেবে। তখন একটা শ্রেণির জন্য রোড ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’
ওই শ্রেণিটিতে কারা আছেন সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামের মালপত্র কেন খুলে নেওয়া হবে। স্টেডিয়ামে কী কেউ ভাত–কাপড় চায়? কেন এখানের মালপত্র খুলে নেওয়া লাগবে? এসব খুলে নেওয়ার তো কোনো আইন নাই। ওই শ্রেণিটি বাধ্য করেছে এসব মালামাল খুলে নিয়ে যেতে।’
হিরো আলম বিসিবির উদ্দেশ করে আরও বলেছেন, ‘আমাদের যেসব মালপত্র খুলে নেওয়া হয়েছে সে সব মালপত্র আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক। এখানে প্রতিবছর বিভিন্ন জেলায় যেমন খেলা হয় আমরাও এই স্টেডিয়ামে সে রকম খেলা দেখতে চাই। ১৫ বছর ধরে বগুড়া স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নাই, আমরা আন্তর্জাতিক খেলা দেখতে চাই।’
গত ১৫ বছরে বগুড়ায় কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে দাবি করেন হিরো আলম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান ওরফে রিপুর সমালোচনা করে হিরো আলম বলেন, ‘আপনারা জানেন গত কয়েক দিন আগে বগুড়া সদরে (বগুড়া–৬) উপনির্বাচন হয়েছে। এই আসন থেকে আমিও নির্বাচন করেছি। এখান থেকে রাগেবুল আহসান রিপু ভাই পাস করেছেন নৌকা মার্কা প্রতীকে। আমি আহসান রিপু ভাই আপনাকে বলতে চাই, বেয়াদবি ক্ষমা করবেন। আপনাকে বগুড়াবাসী ভোটটা কী এই জন্য দিয়েছে? বগুড়ার মানুষের জানমাল এসব রক্ষা করার দায়িত্ব একজন এমপির। আপনাকে সবাই ভোট দিয়েছেন গর্ব করে বগুড়ার এসব আপনি দেখে রাখবেন। আপনি রানিং অবস্থা থাকাকালীন এখান থেকে মালপত্র কেন খুলে নিয়ে যাওয়া হবে?’
জানা যায়, বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে স্টেডিয়ামের মূল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। গত বৃহস্পতিবার এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই দিনই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়। এ ছাড়া স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপার সপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ড্রেসিংরুমের আসবাব ঢাকায় নিয়ে গেছে বিসিবি।
বগুড়ার খেলোয়াড়, দর্শক ও ক্রীড়াসংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মো. রুমেল নামে এক যুবক শহরের সাতমাথা এলাকায় তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন প্রতিদিন মানববন্ধন করছেন।