তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে এখন দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাজারে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে সক্ষমতার জানান দিয়ে আসছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। অবশেষে দেশটির রপ্তানি কৌশলের কাছে হার মানল মেইড ইন বাংলাদেশ। চীন এখনও তার প্রথম স্থান ধরে রেখেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ওর্য়া্ড ট্রেড স্ট্যাটিসিটিকস রিভিউ- ২০২১ এ দুই দেশের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
২০২০ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ৩ শতাশে নেমে আসে। এই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ওই বছর ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬দশমিক ৪ শতাংশ হয়। অর্থাৎ, ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ছিল ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় ২০১০ সালে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৯ শতাঙম বেড়ে গেছে। ওই বছর বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠনসমূহ ও বিশেষজ্ঞরা বলছে, নতুন নতুন বাজার ও বাজারের চাহিদা মতো নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ না করলে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। এছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে কারখানা বন্ধ রাখায় দেশের উৎপাদশীলতা বাধাগ্রস্থ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধরণ বদলাচ্ছে তৈরি পোশাকের ব্যবসায়। যার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য না থাকাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করে পোশাক রপ্তানিকারকরা। একই কারণে বাংলাদেশ, চীনের বাজারও ধরতে পারছে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে জোর দেওয়ায় ভিয়েতনাম বেশি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভিয়েতনামের করা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কার্যকর হওয়ায় আরও বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম।
ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পেছনে আরও কয়েকটি যৌক্তিক কারণ হলো ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। দেশটির পোশাক খাতে বেশিরভাগ বিনিয়োগই চীনাদের। ভিয়েতনামের এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে এটি বড় ভূমিকা রেখে আসছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, পণ্য সরবরাহে চীনের লিড টাইমও বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম। ভিয়েতনাম বাজার দখল কৌশল কাজে লাগিয়ে যেসব দেশে তাদের পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল না সে সব দেশের অনেকগুলোর সঙ্গে তারা এফটিএ করেছে।
করোনা পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশকে দাপট দেখাতে হলে আর এমন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে না হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে সবচেয়ে বেশি। সেই সঙ্গে জোটবদ্ধ বাণিজ্য সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করার ব্যাপারে জোর দেয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস'র (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ। সম্প্রতি চীনে পাওয়া বাণিজ্য সুবিধার আওতায় যেন সব ধরনের পোশাক পণ্য থাকে তা নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন তিনি।
সিপিডির অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকদশক ধরেই ভিয়েতনাম আর বাংলাদেশের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগীতা চলছিল। গত বছর করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনামের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। বায়লাদেশের সব শিল্পকারখানা বছরের বেশ কিছু সময় বন্ধই ছিল। সেই সময়টা ভিয়েতনাম এগিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি অর্ডার পাচ্ছে। চীন, ভারত বা ভিয়েতনামের বদলে অনেক দেশই এখন বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, খুব দ্রুতই বাংলাদেশ তার হারানো অবস্থান ফিরে পাবে।