আজ ৭ জুন, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৬ সালের এই দিনে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন।
ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের ডাকে পূর্ব বাংলায় হরতাল চলাকালে পুলিশ ও ইপিআর নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, মুজিবুল হকসহ অনেকে শহীদ হন। ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা।
ইংল্যান্ডের রাজা জোহানের ফরমান ঘোষণায় ব্রিটেনের জনগণ পেয়েছিল প্রকৃত স্বাধীকার ও মুক্তির স্বাদ। ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজার ওই ফরমানটিই বিশ্বে ঐতিহাসিক ‘ম্যাগনা কার্টা নামে পরিচিত।
ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ‘ম্যাগনা কার্টার আদলেই পরাধীন বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশেও রচিত হয় নূতন এক ‘ম্যাগনা কার্টা।’ ভাগ্যাহত নিপীড়িত বাঙালি জাতির সেই ‘ম্যাগনা কার্টা হলো বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ছিল একটা সাঁকো, যাতে চেপে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হয়েছে জাতি।
ছয় দফা বাঙালীর “মুক্তির সনদ। বহুকাল থেকে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার বাঙালী জাতি “ছয় দফা দাবী” প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে নতুন দিক নির্দেশনা পায়। ১৯৬৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এর আগে, একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে বিরোধী দলের সম্মেলন শুরু হয়।
মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে ওই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। তবে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। এমনকি পূর্ব বাংলার ফরিদ আহমদও প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা এ দাবি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলে, পাকিস্তানের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ছয় দফা দাবি আনা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সংবাদ সম্মেলন করে এর যথাযথ জবাব দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানবন্দরেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে ছয় দফা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরেন।
ছয় দফা দাবিতে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ দাবি গ্রহণ বা আলোচনা করতেও রাজি হয়নি। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন ঢাকায়।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার মধ্যে অন্যতম ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করার। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা শুধুমাত্র দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। পাকিস্তানে দু'টি আলাদা ও অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতাও চাওয়া হয় ছয় দফার একটিতে। মূলত এই ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন একটি দেশ গড়ার বীজ বপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।