বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা রাজনৈতিক অভিলাষ: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিশেষ প্রতিবেদক

জুন ৭, ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম

বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা রাজনৈতিক অভিলাষ: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)‍‍`র বিশেষ ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখন আর পরিসংখ্যানের বিষয় নেই, এটি রাজনৈতিক অভিলাষের প্রকাশ।

দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ লক্ষ্যমাত্রাকে একটি রাজনৈতিক অভিলাষ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, এ বছর যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা নির্বাচন উপলক্ষে উদ্দীপনা তৈরির জন্য দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‍‍`জাতীয় বাজেটে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষেরা কি পেল‍‍` শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন গত ১৫ বছরে সরকার যে ভালো কাজগুলো করলো এ বাজেটের কারনে তা টেকসই করার কৃতিত্ব নিতে পারলো না।

তিনি বলেন, নির্বাচনের বছর উপলক্ষে যে জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। নির্বাচনী বাজেট বলা হলেও এটি নির্বাচনী বাজেট নয়। আমি বলব এখানে পরিসংখ্যান নিয়ে খেলা হয়েছে। আমি ছলনা বললাম না। ভর্তুকি ও কর রেয়াত সব একসঙ্গে করে ফেলা হয়েছে যাতে অঙ্কটা বড় দেখায়।

তিনি বলেন, জবাবদিহিতা না থাকলে বাজেট বাস্তনায়নও করা যায় না, জনগনের প্রকৃত কল্যাণও করা যায় না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে, কিন্তু বৈষম্য বেড়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চায় কি না, এতে আমাদের প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্হ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা এসব ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। গ্রাম থেকে খাদ্য, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য মানুষ শহরে আসছে। এটি কি টেকসই উন্নয়ন বলা হবে কি না, সেই প্রশ্ন আমাদের থাকবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে বড় বাজেটে ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৭তম। বড় বাজেটের মধ্যে সরকার খরচ করে ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ পরিমান জিডিপির ১৫ বা ১৬ শতাংশ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস এক ধরনের কথা বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আরেক পরিসংখ্যান দিচ্ছে। তাহলে কি ডান হাত-বাম হাত একসঙ্গে কাজ করছে না? এ রকম হলে কিন্তু বাজার বেত্তমিজি করবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অন্য সব মন্ত্রণালয়ের মতো জ্বালানি ও জলবায়ু নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবায়নের ফারাক থেকে গেছে। বাজেট এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন আমরা আইএমএফের ঋণের আওতায় রয়েছি। সেই শর্ত অনুযায়ী, ১১টি খাতে সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে জলবায়ু খাতে সংস্কারের একটি শর্তও রয়েছে। কিন্তু, বাজেটে আমরা সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।

সিপিডি‍‍`র ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের যে সম্পদ আছে, সেটি বণ্টনে নায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। এনবিআর কত টাকা আয় করতে পারল, তা নিয়ে কথা বলি। একইভাবে কত টাকা সাশ্রয় করা যায়, তাও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেটে ১ হাজার ২৫০টির মতো প্রকল্প আছে, যার মধ্যে ৮৭৮টি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করতে হবে। এর অধিকাংশই আগের প্রকল্প। এই যে ক্যারিওভার প্রকল্প, এগুলোর কারণেই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। কেবল বাজেট প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক বৈসাদৃশ্য রয়ে গেছে।

ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কর্মসূচি প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, শিক্ষার বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগ করে একটি বড় অঙ্ক দেখানো হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাজেটও যখন শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করে একটা বড় অঙ্কে দাঁড়িয়েছিল।

সিপিডি‍‍`র ট্রাস্টি সুলতানা কামাল সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তি খাতে বাজেটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম।

Link copied!