সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ০২:১৩ এএম
দেশে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলের শরিকরা। তারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে না, দেশের ভেতরে অস্বস্তি ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার হিসাব-নিকাশ কষছে। কিন্তু সেই হিসাব-নিকাশে ব্যাপক গরমিল আছে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের' প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘বিএনপি পাকিস্তানের মতাদর্শে সৃষ্টি। এই দলের মহাসচিব বাংলাদেশে থেকে পাকিস্তানের সুনাম গাইছেন। তাঁরাই আবার দেশের গণতন্ত্র নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না ১৪ দল।’
বিএনপি ফাইনাল খেলার প্লেয়ার নয় এমন মন্তব্য করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ফাইনাল খেলার আগে তো লিগ খেলতে হয়। সেই লিগ খেলতেই তো বিএনপির পা ভেঙে যাবে।’
দেশে নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ঘরে বসে থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে যারা নৈরাজ্যের চেষ্টা করবে, তাদের উচিত জবাব দেওয়া হবে। জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষায় আমরা তাদের প্রতিহত করবো।’
গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম, থাকবো এমন মন্তব্য করে ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা তাদেরকে (বিএনপি) সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তারা সেই সুযোগ নিয়ে পুলিশের গায়ে পেট্রল মারেন, ইট মারেন। যাতে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করে। যাতে তারা বলতে পারেন পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে আমু আরও বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নির্বাচন নয়, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা । অস্বস্তি ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ক্ষমতায় আসার হিসাব-নিকাশ কষছেন। কিন্তু সেই হিসাবে অনেক গরমিল। অনেক পানি গড়িয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে সহযোগিতা করতে বিএনপি নামক দলটির জন্ম দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আইএসআই। পশ্চিমা শক্তিও জড়িত ছিল। জিয়াউর রহমানের উৎস যেখানে বেগম খালেদা ও তারেক রহমানের উৎস সেখানে। তাঁরা এখনও পাকিস্তানের আদর্শ-চেতনা ধারণ করে। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও পাকিস্তানের প্রেতাত্মা পাকিস্তানের কথা বলছে।’
বিএনপির আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্য করতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা বিএনপি ধ্বংস করেছিল। তাঁরাই আবার তত্ত্বাবধায়ক চাচ্ছেন। বাংলাদেশে আর কখনই তত্ত্বাবধায়ক আসবে না।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক জেলে আছে। কিন্তু তার আগে যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনে বুড়িগঙ্গায় ফেলার কথা বলেছেন, সেই ইসলামী আন্দোলনের কেউ জেলে নেই।’
তিনি বলেন, ‘তথাকথিত ইসলামের নামধারী ও স্বাধীনতা বিরোধী দলগুলোর নিবন্ধন থাকার কথা নয়। অথচ দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বাংলাদেশের সংবিধান মানে না। আমি বাধ্য হবো, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে এদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করার জন্য।’
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমি যেভাবে জামায়াত-শিবিরের নিবন্ধন বাতিল করেছি। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের করা ধর্ম মামলায় নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে গ্রেপ্তার করিয়াছি। এটি না করলে-আপনারা যে বড় বড় কথা বলেন মানবতাবিরোধী মামলায় ফাঁসি দিয়েছেন। আমি মামলা না করলে আজও তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য মামলা করতেন কিনা সন্দেহ আছে। এটি ১৪ দলের অবদান, আমি করেছিলাম বলে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের সুভাগ্য, কারণ আজকে যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা ডাক দেয়, মির্জা ফখরুল, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। কারণ আমরা রাজপথে লড়াই করে এসেছি। রাজপথে ছিলাম এবং থাকবো।’
প্রতিবাদ আমরা করবো প্রতিরোধের জন্য এমন মন্তব্য করে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল পাকিস্তানের কথা বলেছেন, এটাতে উনার কোনো দোষ নেই, কারণ স্বভাবগতভাবে চলে এসেছে। জামায়াত বিএনপির সাথে নেই, এটা আসলে ঠিক না। এটা তাদের একটা রনোকৌশল। জামায়াত কিন্তু বিএনপির সাথেই আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে আবারও মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে। আগামী নির্বাচন তারা করতে দেবে না, এটি তাদের মামার বাড়ির আবদার। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন হবে এবং আমরা করবো। বিএনপি নির্বাচনে আসলো কি আসলো না সেটি দেখার বিষয় নয়।’
সমাবেশ ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।