বুধবার ১৫৫-১৬৫ কি.মি বেগে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৪, ২০২১, ১২:৪৭ এএম

বুধবার ১৫৫-১৬৫ কি.মি বেগে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আগামী বুধবার (২৬ মে) ভারতের পশ্চিবঙ্গ ও ওড়িশা হয়ে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার বেঘে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে বর্তমানে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রবিবার (২৩ মে) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার (২৩ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

ঘূর্নিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলেও আবহাওয়ার ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আগে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে তুমুল বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির এ ধারা মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে শুরু হওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

রবিবার (২৩ মে) (২৩ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

ঘুর্ণিঝড় ইয়াস এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোনের সম্ভাবনা নেই। তীব্র থেকে তীব্রতর ঘুর্ণিঝড় হতে পারে। বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে খুলনা, সুন্দরবন এলাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র

ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।সতর্ক সংকেত পাওয়ামাত্র ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছে। আম্পানের সময়ে করোনার কারণে ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ ছিল। এবারও করোনার কারণে তিন গুণ বেশি আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবহার করা হবে। সবার জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। ফনী, বুলবুল, আম্পান মোকাবিলা করেছি। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঝড় মোকাবিলা করা হবে।’

মনিটরিংয়ের জন্য কন্ট্রোলরুম

এদিকে, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। এই কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। 

রবিবার (২৩ মে) ঢাকায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভা ও দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স শেষে তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

উপমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় আগাম সকল প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রস্তুত থাকার জন্য। যাতে মানুষের জানমাল সম্পদের বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি না হয়।’

মোকাবিলায় প্রস্তুত সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় সাতক্ষীরায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শুক্রবার (২১ মে) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এই প্রস্তুতির কথা জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ওই সভায় বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলায় সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে দেড় হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। ১৮৪ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। একই সঙ্গে নগদ দুই কোটি ১৫ লাখ টাকাও হাতে রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রসহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

Link copied!