ঢাকার বদ্ধ নাগরিক জীবনে হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছিল চার শিশু। তাই তাদের একদিন ইচ্ছে হলো কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতার মূলমন্ত্র অনুসরণ করে বদ্ধ ঘরে না থেকে দুনিয়াটা ঘুরে দেখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন তারা চলে গেল ঢাকার ব্যস্ততম বন্দর সদরঘাটে। উদ্দেশ্য লঞ্চ দেখা।
ইচ্ছে পূরণে গত বুধবার (৬ অক্টোবর) রাতে তারা চারজন চড়ে বসে একটি লঞ্চে। ঘুরেফিরে যতোক্ষণে তাদের দেখা শেষ ততোক্ষণে লঞ্চটি ছেড়ে দিয়েছে। তারা চলছে দ্বীপ জেলা ভোলার পথে।
এদিকে তাদের খোঁজ না পেয়ে স্বজনদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তৎক্ষণাত খবর দেওয়া হলো থানায়। পুলিশের তৎপরতায় তারা যখন আবার ঘরে ফিরলো ততক্ষণে কেটে গেছে ৩৯ টি ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে তারা কয়েকশ মাইল দূরের সাগর পাড়ের ভোলা ঘুরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ৪ শিশুকে উদ্ধারের পর তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। শিশু চারটি মোহাম্মদপুর, বছিলা এলাকায় বসবাসরত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিশুটির বয়স ১৫ বছর, সবচেয়ে কমবয়সীটির বয়স ৭ বছর। এদের মধ্যে দুজন সহোদর, বাকি দুজন পারিবারিক সূত্রে তাদের পরিচিত।
গত বুধবার (৬ অক্টোবর) রাতে শিশু চারটি নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েই তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে দুটি শিশুর মা তাসলিমা বেগম সন্তানদের নিয়ে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে থাকেন। তার রিকশাচালক স্বামী বেশ আগেই মারা গেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তাসলিমা বেগমের দুই ছেলে এবং হোসনে আরা ও শিরীন আকতারের ১২ এবং ১০ বছরের দুই ছেলে একসঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। পরে তারা সিদ্ধান্ত নেয় লঞ্চ দেখতে সদরঘাট যাবে। সন্ধ্যার পর সদরঘাটে গিয়ে একটি লঞ্চে উঠে তারা, লঞ্চ ঘুরে দেখতে দেখতে এক সময় লঞ্চ ছেড়ে দেয়। পরে লঞ্চটি বুধবার ভোর ৪টায় ভোলায় পৌঁছায়। পরে তারা সেখানে নেমে সারাদিন সেখানকার ঘাট এলাকায় ঘোরাফেরা করে। পরে সন্ধ্যায় সেখানের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিল ঢাকার লঞ্চ কখন ছাড়বে? পরে একজন একটি লঞ্চ দেখিয়ে দিলে তাতে উঠে পড়ে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি লতিফ বলেন, নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয়। পরে তাদের লঞ্চে চড়ে ভোলা যাওয়ার কথা জানা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে সদরঘাট থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
শিশুগুলোকে থানায় আনা হলে পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে ছুটে যায় এবং পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, থানায় আনার পর তাদের কাছে ভ্রমণের গল্প শোনা হয়। পরে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়া হয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে এসব শিশুদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।