দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সম্পদ আহরণ করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের এই বিভাগের কদর তাই একটু আলাদা। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বলেই দায়িত্বও পান প্রশাসনের বিচক্ষণ কর্মকর্তারা। প্রথম নারী হিসেবে সে দায়িত্বই দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন ফাতিমা ইয়াসমিন। দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এবার অর্থ মন্ত্রণালয়েরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ অর্থ বিভাগের প্রথম নারী সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ১৬ জুন সরকার ফাতিমা ইয়াসমিনকে সচিবের পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব করে। সেই সঙ্গে অর্থ বিভাগে নিয়োগ দিয়েছে। ১১ জুলাই তাঁর নতুন পদে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে নারী সচিবের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে। বর্তমানে দেশে ১০ জন নারী সচিব বা সমপর্যায়ের পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ইআরডি সচিব পদে ফাতিমা ইয়াসমিনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) শরিফা খান। তিনি ইআরডির দ্বিতীয় নারী সচিব হিসেবে নিয়োগ পেলেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্বে আসছেন নারীরা। কাজের ক্ষেত্রেও নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন তারা।
প্রশাসনের উচ্চ পদে নারীর ভবিষ্যৎ আরও ভালো বলে মনে করেন শরিফা খান। তিনি বলেন, এখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী আছেন। মাঠ প্রশাসনে, বিশেষ করে জেলা প্রশাসক পদেও বেশ কয়েকজন নারী আছেন। ভবিষ্যতে তারা সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসবেন। গুণগত মান, দায়িত্বশীলতা ও সততা যাচাই করে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতেও যেন হয়, সেটাই চান তিনি।
অর্থ, ইআরডি ছাড়াও আরও কয়েকটি পদে সচিব বা সচিবের সমপদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে গত মাসেই নিয়োগ পান ফারহিনা আহমেদ। এর আগে তিনি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।
গত বছরের মে থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জাকিয়া সুলতানা। বিসিএস দশম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা এর আগে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে আছেন হামিদা বেগম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের (সচিব) দায়িত্ব পেয়েছেন মাহফুজা আখতার। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সচিব পদে শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) পদে নাহিদ রশীদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নাসিমা বেগম দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের পর সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিবের পদটিই প্রশাসন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। ফলে এই পদে যাওয়া নারী-পুরুষ সবার জন্যই বড় আগ্রহের বিষয়। বর্তমানে ৭৬ জন সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। যাঁদের মধ্যে ১০ জন নারী। সে হিসাবে মোট সচিবের প্রায় ১৩ শতাংশ নারী। সমতার বিবেচনায় এ হার এখনো কম। তবে ইতিবাচক দিক হলো প্রশাসনের সর্বোচ্চ এ স্তরে এখন নারীদের সংখ্যা বাড়ছে।