জুন ১৮, ২০২২, ১০:১১ এএম
পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্বারণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। বন্যা কবলিতদের উদ্ধারে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
বন্যায় সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় সারা দেশের সঙ্গে সিলেট জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেটের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা এখন বন্যা কবলিত।
সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চল বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বন্যার পানি: ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে ঘোষণা করা হয় বিমান চলাচল বন্ধ।
পানিতে ডুবে আছে কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ওসমানীনগরসহ সবক’টি এলাকা। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে এসব অঞ্চলের মানুষের বাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটে এখন কারও বাড়িতে হাঁটুপানি, কারও কোমরসমান আবার কারও বাড়িতে গলাসমান পানি। মাচা বানিয়ে কিংবা ঘরের চালে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে অনেককে।
অনেকেই নৌকায় করে বা সাঁতরে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা কোন উঁচু জায়গায় ঠাঁই নিয়েছেন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের ফলে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দী এসব মানুষ।
জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে মানুষজনকে। পানিবন্দি মানুষজনকে উদ্ধার অভিযানে রয়েছে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট। সুনামগঞ্জ পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ নেই। তাই মোবাইলে চার্জও নেই। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ঘরের ভেতর পানিতে সয়লাব। চুলায় রান্নাও করা যাচ্ছে না। অসহায় এবং দুর্বিসহ মানবেতর সময় পার করছেন এই অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষেরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটের ২৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি প্রাথমিক ও ৬০টি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ১২২ বছরে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।
তিনি আরও বলেন, “মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সেই বৃষ্টির পানি খুবই দ্রুত গতিতে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে নেমে এসেছে। সেজন্য বন্যা অল্প সময়ে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”
মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে এবং আরও কয়েকদিনে সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যার আরও অবনতি হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী সহ কয়েকটি জেলাতেও আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।”
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, খাদ্যসংকট দূর করতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্ভোগ মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।” বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।