অক্টোবর ৯, ২০২২, ১০:৩৭ পিএম
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সংকট আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় গ্রীডে বিপর্যয়ের পরও এখনও গ্যাস কেনা যাচ্ছে না। স্পট মার্কেটে দাম বেশি থাকায় এই সমস্যা ২০২৫ সাল নাগাদ থাকবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশন মোট সাত ঘণ্টা বন্ধ রাখতে চাচ্ছে পেট্রোবাংলা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২৫ সাল পর্যন্ত থাকবে গ্যাস সমস্যা!
সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠার কথা বলা হলেও উল্টো সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখের পর থেকে লোডশেডিং আরও বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকায় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা এবং জেলাগুলোতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ডিপিডিসি ও ডেসকোকে ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে, যা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ। গ্যাস সংকটে কলকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, অক্টোবর আর নভেম্বরে চারটি কার্গো আসবে। এতে এই দুই মাসের মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস কমবে। ডিসেম্বর থেকে আবার পাঁচটি করে কার্গো আসবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, কাতার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগে গ্যাস দিতে পারবে না তারা। স্পট মার্কেটেও গ্যাসের দাম আমাদের কেনার মতো অবস্থায় আসেনি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গড়ে ১০০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সিএনজি স্টেশনগুলো আরও দুই ঘণ্টা বন্ধ রেখে পিক আওয়ারে যাতে সেই গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ চলছে।
পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না কেউ
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে গ্যাসের গড় চাহিদা সাড়ে তিন হাজার কোটি ঘনফুট (এমএমসিএফডি)। স্পট মার্কেট থেকে যখন এলএনজি কেনা হতো, তখন গড়ে তিন হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এখন গড়ে ২৬০০ থেকে ২৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাস খাতে গড়ে ১০০০ এমএমসিএডি গ্যাস দেওয়া হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ২৬৬৬ এমএমসিএফডি। এর মধ্যে আমদানি করা গ্যাস ৩৮০ এমএমসিএফডি, বাকিটা স্থানীয় উৎপাদন।
তবে বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন গড়ে ৯৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস দিয়ে ১১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা থাকলেও ৫০০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ থাকা ডিজেলচালিত (ছয়টি) কেন্দ্র দিয়ে উৎপাদন শুরু করায় খরচ বেড়ে গেছে।
বিপাকে শিল্প খাতগুলো
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক আলম বলেন, গ্যাস সংকট অতীতের চেয়ে বেড়েছে। সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শিল্প কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এতদিন কাতার থেকে গড়ে প্রতি মাসে পাঁচটি করে এলএনজির কার্গো আসতো। কিন্তু চলতি অক্টোবর ও আগামী নভেম্বরে আসবে চারটি করে। ফলে জাতীয় গ্রিডে ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ কমে যাবে। গ্যাস সাশ্রয়ের জন্য আরও দুই ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সিএনজি স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, শুনছি আরও দুই ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখতে চায় পেট্রোবাংলা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলে তো আমরা মানতে বাধ্য। কিন্তু সারা দেশে সিএনজি স্টেশনে মাত্র ২ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়। এই অল্প পরিমাণ গ্যাস থেকেও সাশ্রয় করে কতটুকু উপকার হবে? গ্যাসে সিএনজি সেক্টর থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ পায়।
গ্যাস সংকটে ২০ কেন্দ্র বন্ধ
পিডিবি সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
গত শুক্রবার সম্ভাব্য চাহিদা ছিল ১৩৬০০ মেগাওয়াট, উৎপাদন ১২৪৩৫ মেগাওয়াট আর লোডশেডিং ১১৬৫ মেগাওয়াট। তবে নানা কারণে যে উৎপাদনের কথা বলা হয় তার চেয়ে কমপক্ষে ৫ শতাংশ কম গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা সম্ভব হয়। সে হিসাবে যা বলা হয়, তার চেয়ে আরও ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়। বাস্তবে ৩০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক সূত্র।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১ মার্চ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এখন আরও দুই ঘণ্টা যোগ হলে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সাত ঘণ্টা করে।