ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এর বদলে একটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
বুধবার (২১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
জানা গেছে, ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার এস আলমের হাতে থাকায় আপাতত ব্যাংকটিতে সব স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়া হবে। পরে আগের পরিচালকরা ২ শতাংশ করে শেয়ার কিনে আসার পর তাদের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।
ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ বা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারও নামে এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ারধারী নেই। পরে যখন কোনও শেয়ারহোল্ডার ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন তখন তাদের মধ্য থেকে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।”
গভর্নর বলেন, “এস আলমের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব শেয়ার সরকারের দায়িত্বে নেয়া হবে। এস আলম যদি সব দায় পরিশোধ করে তবে তাদের শেয়ার ছেড়ে দেয়া হবে, না হলে সমন্বয় করা হবে।”
আরও পড়ুন: ভাঙছে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড
তিনি আরও বলেন, “এস আলম গ্রুপের সব শেয়ার আমরা আইনগতভাবে টেকওভার করবো দায়ের বিপরীতে।”
গভর্নর যোগ করেন, “তবে তারা যদি টাকা ফেরত দিতে পারে তাহলে শেয়ার ফেরত পেতেও পারে। তবে আমরা মনে হয় না তাদের সেই উদ্দেশ্য আছে। যা লুট করার তা লুট করে ফেলেছে তারা।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “এখন যে ভগ্নদশা আছে সেখান থেকে উদ্ধার করতে হবে। হয়তো ১০০ টাকা পাবো না। তবে যেটুকু পাওয়া যায় তাই উদ্ধার করতে হবে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেন ব্যাংকটির শতাধিক কর্মকর্তা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এই চিঠি জমা দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য তারা দ্রুত পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানান তিনি।
নানা অনিয়ম ও অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাতটি ব্যাংকসহ মোট ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংককে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের হাতে দেওয়া হয়। এরপর সাড়ে ৭ বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। এই টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে।