জুন ২২, ২০২৩, ০২:১৯ এএম
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির হোতা এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এই ঋণ কেলেঙ্কারির প্রধান আসামি বাচ্চু বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন নিশ্চিত হয়ে তাঁর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিল দুদক।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (২১ জুন) আদালত বাচ্চুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান।
দুদক কমিশনার বলেন, আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন। তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন এবং তাকে যেন বিচারের মুখোমুখি করতে পারি সেজন্য তার বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে দুদক। তবে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা এখন আদালত দেন। তাই দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) আদালত বাচ্চুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
২০১৫ সালে দায়ের হওয়া মামলার আট বছর পর শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যান বাচ্চুসহ ১৪৭ জন। তাদের অভিযুক্ত করে গত ১২ জুন একযোগে ৫৯ মামলার চার্জশিট দিয়েছে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই দিন কমিশন বৈঠকে এই চার্জশিট অনুমোদনের পর তা আদালতে দাখিল করা হয়।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় ৮২ ঋণগ্রহীতা, ২৭ ব্যাংকার ও ১১ জন ভূমি জরিপকারীর নাম থাকলেও ছিল না ঋণ কেলেঙ্কারির মূলহোতা আবদুল হাই বাচ্চুর নাম।
ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি করা হলেও আবদুল হাই বাচ্চু ছিলেন অধরা। তাকে কোনো মামলায়ই আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে বরাবরই দুদকের বক্তব্য ছিল, ‘ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’
একই সঙ্গে রহস্যজনক কারণে মামলার তদন্ত আটকে ছিল। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার অসন্তোষ জানালে পাল্টে যায় সবকিছু। পরে মামলার তদন্তকালে দুদক জানতে পারে আলোচিত এই ঋণ কেলেঙ্কারির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। গত ১২ জুন একযোগে দাখিল করা হয়েছে ৫৯ মামলার চার্জশিট। অভিযুক্ত করা হয়েছে বাচ্চুকেও।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার্জশিটে অভিযুক্ত হওয়ার পর আইনের চোখে এখন ফেরার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আবদুল হাই বাচ্চু। তাকে গ্রেফতারেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু তার অবস্থান এখন কোথায় সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই তদন্ত সংস্থার কাছে। তবে আদালত চাইলে এ ব্যাপারে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে তাকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে পারেন। জানা গেছে, আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আবদুল হাই বাচ্চু গড়ে তুলেছেন বিশাল খামারবাড়ি।
আট বছরে বিভিন্ন সময়ে বাচ্চুর যোগসূত্র খুঁজে পায়নি দুদক। এ নিয়ে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা একাধিকার গণমাধ্যমের কাছে দায়সারা বক্তব্য দেন। তারা দাবি করেন সম্পৃক্ততা না পেলে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করার সুযোগ নেই। কিন্তু হঠাৎ করে রহস্যজনক কারণে দুদকের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি বলা হচ্ছে, তিনি শুধু দায়ী নন। এ মামলার অন্যতম আসামি।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন আবদুল হাই বাচ্চু। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়ন করা হয়। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগের মুখে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপ সামলাতে না পেরে পদত্যাগ করেন বাচ্চু।