মুরগির বাড়ে দাম, জনগণের ছোটে ঘাম

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২০, ২০২৩, ০২:৪৮ এএম

মুরগির বাড়ে দাম, জনগণের ছোটে ঘাম

বাজারে সব কিছুর দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ। আসছে রোজাকে সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পোল্ট্রি মুরগির দাম। মুরগির ‘মহাজন’রা বলছেন বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করায় বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এজন্য দায়ি করছেন, পোল্ট্রি মুরগির খাদ্যের কাঁচামাল সংকটকে। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। আর এর প্রভাব পড়বে পুরো পোল্ট্রি শিল্পে।

দাম বেশির কারণ খুঁজতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক মুরগির ‘মহাজন’ মামুন মিয়া বলেন, “আমরা এক কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের মুরগি ২১০ টাকা কেজি ধরে দোকানে আনি। তারপর ওঠানামার খরচ,হাউজি (দোকান ভাড়া) ইজারাসহ নানান খরচ দিতে হয়। এরপর আমাদের অল্প লাভ রেখে ছেড়ে দেই খুচরা দোকানিদের কাছে।”

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে তাই বিক্রির দাম ও বেশি।পোল্ট্রি খামারিরা জানান, মুরগির খাওন (খাদ্য) বেশি দামে কিনে এরা হেগো (তাদের) পোষায় না ।

মেসার্স জব্বারিয়া পোল্ট্রি ফার্মের মালিক আলমগীর মুঠেফোনে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “করোনা মহামারির পর থেকে পোল্ট্রি ফিডের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫৫০ টাকা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ গড়ে ১৮০-১৯০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০--২৭০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে অনুপাতে মুরগির দাম বাড়াতে পারছে না খামারিরা।

এবিষয়ে আমান ফিডের নাসিমুন হায়দার বলেন, ২০১৯ পর বয়লার,স্টাটার,লেয়ার,বয়লার শির ফিডসহ সব ধরণের ফিডের দাম বেড়েছে তিনগুণ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এরমধ্যে ৮৬ হাজার ৯২৭টি নিবন্ধিত। এই খাত থেকে বছরে ২ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৩৫ কোটি ডিম এবং ৩৮ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদার শতভাগ পূরণ হয় এখান থেকেই।

মুরগির খাদ্যের মধ্যে মসুরের ভুষি, ছোলার ভুষি, মটর ভুষি, ভুট্টা গুঁড়া, রাইস পলিশ/আটাকুঁড়া, সয়াবিন খৈল, সরিষার খৈল, মুগডালের গুঁড়া ও লবণের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।

খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো টেক ফিডস লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শাহ জালাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, "বাজারে খাদ্যের কাঁচামাল ভূট্টা, সয়াবিনের খৈলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে বাজারে প্রতিকেজি ভুট্টা ছিল ৩৬-৩৭ টাকা। যা এখন ৪৩ টাকা। এমনকি অনেক কাঁচামাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও আমরা ৮ লাখ ডলারের ভূট্টার এলসি করতে পারিনি। এভাবে চলতে থাকলে কাঁচামাল সংকটে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো এগ্রো খাতে।"

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন মাত্রা পেয়েছে ফিড ইন্ডাস্ট্রি। যার দরুণ, মহামারির আগের প্রতি বছর ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ১২-১৫ শতাংশ।পুঁজিবাজারের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানীর (আমন ফিড, ন্যাশনাল ফিড এবং ইনডেক্স এগ্রো) আর্থিক অবস্থাও বলছে, বর্তমানে ফিড ইন্ডাস্ট্রি খাতে ব্যবসার চিত্র ভালো নয়।

পুঁজিবাজারের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানীর (আমন ফিড, ন্যাশনাল ফিড এবং ইনডেক্স এগ্রো) আর্থিক অবস্থাও বলছে, বর্তমানে ফিড ইন্ডাস্ট্রি খাতে ব্যবসার চিত্র ভালো নয়। তাদের প্রকাশিত তথ্যমতে, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছর ভালো মুনাফা করতে পারেনি তারাG

Link copied!