জানুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৯:০২ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ‘শিবির সন্দেহে’ এক শিক্ষার্থীকে রাতভর কয়েক দফায় নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
রবিবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিজয় একাত্তর হলের পদ্মা ব্লকের ৪০০৮ নং রুমে নির্যাতন করে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েক ধাপে নির্যাতন ও মারধরের পর সোমবার দুপুরের দিকে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। হস্তান্তরের আগেও মারধর করেছে ওই শিক্ষার্থীকে। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল টিম ওই শিক্ষার্থীকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার মারধর করেছে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর নাম শাহ্ রিয়াদ মিয়া সাগর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর মতে, অভিযুক্তরা হলেন— হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাতে শিবির সন্দেহে শাহ রিয়াদকে পদ্মা ব্লকের ৪০০৮ নম্বর রুমে নিয়ে মারধর করতে থাকে হল ছাত্রলীগের কর্মীরা। জেরা করে তার সাথে আরও কে বা কারা জড়িত তাদের নাম জানতে চায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় সবাই মিলে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এরপর সকালে তাকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। কিন্তু সকালে তাকে বের হতে না দিয়ে আবারও জেরা এবং বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
পরে প্রক্টিরিয়াল মোবাইল টিমের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও ফলো করতে থাকে হল ছাত্রলীগ নেতা তুহিন, সাকিব ও সুজন। প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা তার কাছ থেকে তথ্য নেন, তথ্য নেওয়া শেষে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা নিয়ে যাওয়ার সময়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনেও মারধর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে শিক্ষার্থীর হাত ও কানে মারধরের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মীরা জেরার বিষয়টি স্বীকার করেন তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।
এদিকে প্রক্টরিয়াল টিম সূত্রে জানা যায়, শাহরিয়াদকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বাইক নিয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িকে অনুসরণ করেন। এক পর্যায়ে গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের সামনে পৌঁছালে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফের মারধর করা হয়। মারধরকারীরা হলেন- একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ উপসম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিব।
ভুক্তভোগী শাহ্ রিয়াদ মিয়া বলেন, ‘এক জুনিয়রের সাথে আমার কথার জের ধরে আমাকে ৪০০৮ নং রুমে ডেকে নিয়ে জেরা করে, ফোন চেক করে পরে মারধর করে। আমার কান, হাতসহ দেহের বিভিন্ন জায়গায় কাঠ, হাত দিয়ে আঘাত করে। বাবা-মা তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মারধর করতেই থাকে। আমাকে একটা মিনিটও ঘুমাতে দেয়নি।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সে শিবির করার কথা আমাদের সামনে স্বীকার করেছে। তার বিষয়টি রাতেই আমরা প্রভোস্ট স্যারকে জানিয়েছি। তাকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। আমরা সুন্দরভাবে প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দিয়েছি।’
এদিকে অভিযুক্ত পিয়ার হাসান সাকিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান। ইউসুফ তুহিন ও বায়োজীদ বোস্তামিকে কল দেওয়া হলে তারা ফোব রিসিভ করেননি। শাকিবুল ইসলাম সুজনের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী শিবিরের সাংগাঠনিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জেনেছি, প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। ছাত্রলীগ প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। কেউ তাকে মারধর করেনি। ছাত্রলীগ মারধরের রাজনীতি করে না।’
বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘ছাত্র শিবিরের সাথে ওর সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি কিন্তু তার সম্পৃক্ততা আমরা শারীরিকভাবে দেখি নাই যান্ত্রিক মাধ্যমে দেখেছি। যেটা সে নিজেও স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এসব বিষয় প্রক্টর দেখবেন।’