বিশ্বে প্রতিদিন ৮০ কোটি লোক ক্ষুধার্ত থাকে। তার বিপরীতে অপচয় হয় ১০০ কোটি লোকের এক বেলার খাবার, বলেছে জাতিসংঘের ‘খাদ্য অপচয় সূচক ২০২৪’ এর সমীক্ষায়।
সেখানে বলা হয়, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে মোট অপচয় হয়েছে ১০৫ কোটি মেট্রিক টন খাবার। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে প্রাপ্ত মোট খাবারের ৫ ভাগের ১ ভাগই বৃথা নষ্ট হচ্ছে।
অথচ একই সময়ে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী খাদ্য অনিশ্চয়তা ও ৭৮ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্যাভাবে দিন কাটাচ্ছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার এই প্রতিবেদন বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধের পাশপাশি খাদ্য অপচয়কে পরিবেশগত বিপর্যয়ের অকাট্য কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। বলেছেন সংস্থাটির পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন।
‘খাদ্য অপচয় একটি বৈশ্বিক মর্মান্তিক ঘটনা, খাদ্য অপচয়ের ফলে লাখ লাখ মানুষ খেতে পায় না। এটি কেবল মাত্র চিহ্নিত উন্নয়ন সংকট নয়, এই বিপুল সংখ্যক খাদ্য অপচয় একই সঙ্গে তীব্র পরিবেশগত ঝুঁকিও সৃষ্টি করছে।’
প্রতিবেদনটিতে, ফসের মাঠ থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত আসতে আসতে নষ্ট হওয়া কিংবা পঁচে যাওয়া খাবারকে ‘ক্ষতি’ ও গৃহস্থলী বা রেস্টুরেন্ট থেকে ফেলে দেওয়া খাবারকে ‘অপচয়’ হিসেবে পৃথকভাবে চিহ্নিত করেছে।
এর মধ্যে ২০২২ সালে পারিবারিক পর্যায় থেকে অপচয়কৃত মোট খাবারের পরিমাণ ৬৩ কোটি টন। যা ,মোট অপচয়ের ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্য পরিবেশন খাত ও খুচরা বিক্রয় খাতে অপচয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ২৮ ও ১২ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী একজন মানুষ বছরে গড়ে ৭৯ কেজি খাবার অপচয় করেন এবং বাংলাদেশের হিসাবে তা ৮২ কেজি।
বৈশ্বিক উষ্ণতার আট থেকে ১০ শতাংশ নিঃসরণ ঘটে, কেবল খাদ্য অপচয়ের থেকে। যা বিমান শিল্পের প্রায় পাঁচগুন বেশি। অথচ এখন পর্যন্ত কেবল ২১টি দেশ এই খাদ্য অপচয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে তাদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায়।
বরাবরের মতো উপেক্ষিত হলেও খাদ্য উৎপাদনে জমি, পানিসহ বিপুল সংখ্যক সম্পদ ব্যায়িত হয়, এবং খাদ্য খাত থেকে মোটের ওপর নির্গত হয় বৈশ্বিক নিঃসরণের এক তৃতীয়াংশ কার্বন। তাই বারবার এই খাতে মনযোগ বাড়ানোর কথা বলে আসছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ডেকে আনতে পারে বিষয় ভয়াবহ পরিণতি। যেমন, অপচয়কৃত বেশিরভাগ খাদ্য ব্যয়িত ব্যবহার হয় জমি ভরাটে, যা থেকে উৎপন্ন হয় মিথেন গ্যাস। আর বায়ুমণ্ডলে নির্গত হলে গ্যাসটি ২০ বছরের মধ্যে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের চেয়েও ৮০ গুণ বেশ ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
খাদ্য অপচয়ে খুব একটা তফাৎ নেই ধনী কিংবা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে। শতকোটি ক্ষুধার্ত মুখ থাকার পরেও সবাই প্রতিনিয়ত অপচয় করে যাচ্ছে খাদ্য, যা ক্রমশ বাড়াচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। তবুও কেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এর কোনো সমাধান?