মে ২৮, ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অবশিষ্ট সব ফেডারেল চুক্তিও বাতিলের পরিকল্পনা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সেবা প্রশাসন (জিএসএ) থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের (ফেডারেল) সব সংস্থাকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলো বাতিল বা পুনর্বণ্টনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এসব চুক্তির মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের পরিচালনার নীতি–কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনার দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রিপাবলিকান সরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অবস্থান দুর্বল করতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এটি সেসবের সর্বশেষ।
ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে আইভি লিগভুক্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল গবেষণা অনুদান বাতিল করেছে। গত সপ্তাহে হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি প্রত্যাহারের পদক্ষেপও নিয়েছে তারা। হার্ভার্ডে বর্তমানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৮০০, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ।
গত শুক্রবার বোস্টনের একজন ফেডারেল বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির অনুমতি বাতিল করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানির আগপর্যন্ত আদালতের ওই আদেশ কার্যকর থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক কৌঁসুলি বলেছেন, প্রশাসন আদালতের ওই আদেশ মেনে চলছে এবং নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।
ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বিদেশি দূতাবাসগুলোকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভিসা ও বিনিময় কর্মসূচির ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ না করার নির্দেশ দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানাতে গতকাল কয়েক শ বিক্ষোভকারী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরাও ছিলেন।
জিএসএর চিঠিতে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে এখনো বৈষম্যমূলক ভর্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে বৈচিত্র্য বাড়াতে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জাতিগত পরিচয়কে একটি বিবেচ্য মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ২০২৩ সালে উচ্চশিক্ষায় অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন (সমতা প্রতিষ্ঠাব্যবস্থা) বিলোপের সিদ্ধান্ত দেয়।
এ বিষয়ে জানা আছে—এমন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, গতকাল সকালে ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাছে জিএসএর ওই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে সংস্থাগুলোকে আগামী ৬ জুনের মধ্যে বাতিল করা চুক্তির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি এ–ও বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সেবা-সম্পর্কিত চুক্তিগুলো অন্য সরবরাহকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একাধিক প্রক্রিয়াগত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম ও ভর্তিপ্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে গতকাল দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছু সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান করা প্রয়োজন। তবু ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্তগুলো তার কাছে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে মনে হয়েছে।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হার্ভার্ড বিশ্বাস করে, দেশসেবাই তাদের মূল দায়িত্ব।’