বদলির পর থানা থেকে সোফা, এসি, টেলিভিশন খুলে নিলেন ভূঞাপুরের ওসি!

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ২৭, ২০২৩, ০১:২৪ এএম

বদলির পর থানা থেকে  সোফা, এসি, টেলিভিশন খুলে নিলেন ভূঞাপুরের ওসি!

থানা থেকে খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টিভি, এসি এবং আইপিএস। ছবি: সংগৃহীত

ওপর থেকে ওসির বদলির আদেশ এসেছে থানায়। এ কারণে তিনি থানা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রস্তুতি হিসেবে তিনি একে একে খুলে নিচ্ছেন  থানার কক্ষে লাগানো এসি, টেলিভিশন, আইপিএস ও সোফাসেট! ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানায়। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ঘটিয়েছেন এই ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় এখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

সম্প্রতি ওসি ফরিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়। ওসিও বিদায়ের প্রস্তুতি শুরু করেন। এরইমধ্যে থানা কক্ষে লাগানো এসি, টেলিভিশন, আইপিএস ও সোফা তিনি নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জড়ো করেন নিজের বাসায়। থানা এলাকার লোকজন এবং স্থানীয় সুশীল শ্রেণির মধ্যে এ নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা অভিযোগ করেন, থানার সৌন্দর্য ও সুযোগ বৃদ্ধির জন্য এসব জিনিসগুলো উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। 

জানা যায়, শুক্রবার (২৫ আগষ্ট) রাত ৯টার দিকে থানার এক পুলিশ সদস্য ও বহিরাগত অপর একজনকে নিয়ে ভ্যান চালকের সহায়তায় থানার কক্ষ থেকে জিনিসপত্রগুলো খোলা হয়। এরপর সেগুলো থানা থেকে ভ্যানযোগে ওসির কোয়ার্টারে নেওয়া হয়।

এ দিকে থানার সুযোগ-সুবিধার জন্য যারা জিনিসগুলো উপহার দিয়েছেন তারা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, একজন ওসি ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা। সর্বসাকুল্যে তিনি ২২ হাজার টাকা মূল বেতন ও আনুষাঙ্গিক মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার মত বেতন পান। এমন টাকার বেতনভুক্ত একজন সরকারি কর্মচারী একটি এক টনের এসি, ৫৬’’ এলইডি স্মার্ট টেলিভিশন, সোফা সেট কেনার মতো আর্থিক সার্মথ্য রাখেন না। যদি না তিনি এসব কারও কাছ থেকে উপহার হিসেবে পান। সেই উপহারের জিনিস ‍ওসি বদলি হওয়ায় খুলে নেওয়া নৈতিকভাবে কতটা সঠিক, প্রশ্ন রাখেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার স্বাক্ষরিত স্মারক নং ৫১৭০/১ (৪৯) (আরওআই) আদেশে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তার ওই বদলির আদেশের পরের দিন শুক্রবার রাতে থানার এসি, টেলিভিশন, সোফা ও আইপিএস খুলে নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, থানায় জিনিসপত্র ব্যক্তিগত কাউকে দেওয়া হয় না। থানায় যে ওসি আসবে সেই ব্যবহার করবে। এ জন্যই জিনিসপত্রগুলো কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। এতো নিচু মন মানসিকতার ওসির সেটা জানা ছিল না।

স্থানীয় নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জুরান মন্ডল বলেন, থানার সৌন্দর্য্য বর্ধন ও থানার যেই ওসি আসুক তারা যেন সুবিধা ভোগ করতে পারে সে জন্য বালু মহলের টাকা দিয়ে জিনিসপত্রগুলো দেওয়া হয়েছে। থানার স্বার্থে, কারও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। শুনেছি তিনি সেগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা ঠিক না। তাকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়নি। তার চেয়ারটাকে সম্মান করে দেওয়া হয়েছে।

ভূঞাপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. লুৎফর রহমান জানান, ওসির টাকায় কেনা জিনিসপত্র হলে তো সে নিতেই পারে। এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

বদলি হওয়া  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, যেগুলো থানা থেকে খোলা হয়েছে সেগুলো ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে কেনা। সুতরাং সেগুলো আমি নিতেই পারি।

জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সাংবাদিকদের বলেছেন, কারও অনুদানের টাকায় কিনে থাকলে সেগুলো ওসি নিতে পারেন না। যদি ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হয় তাহলে নিতে পারবেন। যদিও এই বিষয়ে কিছুই জানি না।

Link copied!