স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

উম্মেহানি আইরিন

জুন ৩, ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম

স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

বসুন্ধরায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ছবি: সংগৃহীত

স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে সরকারের রাজস্ব খাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক পথে আমদানি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ জমা হতো।

রাজধানীর বসুন্ধরায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সহ- সভাপতি রিপনুল হাসান। তিনি জানান, গত কয়েক মাসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের  সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রায় ২৬ কেজি চোরাচালানের স্বর্ণ জব্দ করা হয়। যার বাজার দর প্রায় ২৬ কোটি টাকা।

২০১৪-২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ৯২৫ দশমিক ৯১৯ কেজি চোরাচালানের স্বর্ণ জব্দ করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ২৭ দশমিক ৭১৩ কেজি চোরাচালানের স্বর্ণ জব্দ করা হয়। ২০১৪-২০২২ সাল পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ কর্তৃক গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ২৯০ ও দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২৮৯। গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি স্বর্ণ জব্দ করে।

এপিবিএনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিগত কয়েক বছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩১ দশমিক ১১০ কেজি স্বর্ণের বার ও অলংকার জব্দ করেছে। যার বর্তমান বাজার দর ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই ২০২০ সালে ২ দশমিক ৭৭৫ টন, ২০২১ সালে ২৫ দশমিক ৬৮৯ টন, ২০২২ সালে ৩৫ দশমিক ৭৩৩ টন ও ২০২৩ সালে ৩১ দশমিক ৪৬৮ টন সোনার বার ব্যাগেজ রুলের আওতায় আমদানি হয়েছে।

এছাড়া ২০২০-২০২২ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য চারটি চালানে ২ কেজি ১৬০ গ্রাম ডায়মন্ড আমদানি করা হয়েছে। তবে কোনো হীরার অলংকার আমদানি হয়নি। গত ১৯ বছরে যতো হীরা আমদানি হয়েছে, তার ৮৭ শতাংশই ভারত থেকে আনা হয়েছে।

২০২১ সালে সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌনে ২ কোটি টাকার ১৪৪টি হীরার গহনা জব্দ করেছে বিজিবি। ২০১৮ সালে ৭০ লাখ টাকার হীরার গহনা জব্দ করা হয়।

শুল্ক কর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণে হীরা আসছে। গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এই হীরার বাজার পুরোটাই চোরাচালান নির্ভর হয়ে আছে।

বাজুসের ধারনা প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথে অন্তত প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, স্বর্ণের বার, ব্যবহৃত পুরনো জুয়েলারি ও হীরার অলংকার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। বছর শেষে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। যার পুরো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা চোরাকারবারিরা বিদেশে পাচার করে থাকে।

ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মধ্য দিয়ে স্বর্ণের বার আনা বন্ধ করা, ট্যাক্স ফ্রি স্বর্ণের অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের বদলে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম আনা এবং একই ধরনের অলংকার দুটির বেশি না আনার সুপারিশও করে বাজুস। সেই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান পরিচালনারও আহ্বান জানান তারা।

Link copied!