২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিতে পরোক্ষ করের হার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শূন্য শুল্কের পণ্য বা সেবাতেও শুল্ক আরোপ করা হবে। ফলে খাদ্যদ্রব্যসহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে।
এবারে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন পণ্যের দাম বাড়বে আসন্ন বাজেটে:
সিগারেট
প্রতিবারের মতো আগামী বাজেটেও সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানো হচ্ছে। তাই সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে।
মোবাইল ফোন সিম কার্ড ও কথা বলা
মোবাইল অপারেটরদের সিম কার্ড বিক্রির ওপর কর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা হতে পারে। ফলে বাড়তি দামে সিম কার্ড কেনা লাগতে পারে ক্রেতাদের।
রাজস্ব আদায়ের আওতা বাড়ালে মোবাইলে কথা বলতে আরও বাড়তি অর্থ গুনতে হবে ভোক্তাকে। এখন একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তা ৬৯ দশমিক ৩৫ টাকার কথা বলতে পারবেন।
গাড়ি
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট পাশের প্রাক্কালে এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। বৈষম্য হ্রাসে বাজেটে এই সুবিধা বাতিল করে প্রস্তাবিত বাজেটে গাড়ি আমদানি করতে হলে এমপিদের ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবনা আসতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাড়ি আমদানিতে কর দিতে হবে এমপিদের
অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি রোধে হাইব্রিড ও নন হাইব্রিড টাইপের গাড়ি ছাড় করতে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত যোগ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস
কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর আরও দুই শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। ফলে বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হবে।
বিনোদন পার্ক
বর্তমানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশে এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পার্কে ঘোরার খরচ বাড়বে।
চাল, ভোজ্যতেল, ওষুধ
আমদানিতে পরোক্ষ কর হিসেবে আমদানি শুল্ক,সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হবে আসন্ন বাজেটে। যার ফলে ৩৩৫টি মৌলিক পণ্যের শুল্কছাড় আর থাকছে না। এই মৌলিক পণ্যের মধ্যে বাসমতি চাল, গম, জ্বালানি, সার, বীজ, সয়াবিন তেল, পাম তেল, গ্যাস ও ওষুধ । গমের দাম বাড়ার ফলে আটা-ময়দার দামও বাড়বে।
কাজুবাদাম
দেশে কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেওয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে কাজুবাদামের দাম আরও বাড়তে পারে।
এয়ারকন্ডিশন (এসি)
গরমে স্বস্তি পেতে অনেকে এয়ারকন্ডিশন বা এসি কিনছেন। আগামী বাজেটে বিলাসবহুল পণ্য বিবেচনায় দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, এর প্রভাবে এসির দাম বাড়তে পারে।
ফ্রিজ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য খাতকে সরকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। যা আর বাড়ানো হবে না বলে জানা গেছে। ফলে নতুন অর্থবছরে ৫ শতাংশ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
পানির ফিল্টার
বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারের দাম বাড়তে পারে।
এলইডি বাল্ব
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে অনেকে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করেন। অদূর ভবিষ্যতে এলইডি বাল্বের দাম বাড়তে পারে। কারণ এলইডি বাল্ব ও এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সন খরচ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ব্যক্তিগত সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সন বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে মনোযোগ দিয়েছে এনবিআর। গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কীট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এই কারণে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।
জেনারেটর
লোডশেডিং মোকাবিলায় বাসাবাড়ি বা শিল্পে জেনারেটরের ব্যবহার বাড়ছে। সেখানেও নজর দিয়েছে এনবিআর। জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে।