ঢাকার পথে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী; কী থাকছে সফরে?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম

ঢাকার পথে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী; কী থাকছে সফরে?

সংগৃহীত ছবি

পশ্চিমাদের দ্বারা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রাশিয়া। এই মুহূর্তে পূর্বের দেশগুলোর সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটি। তারই অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ সফরে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। 

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন তিনি। এটি রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। শীর্ষ নেতৃত্ব তো নয়ই, এর আগে কোনো ক্যাবিনেট সদস্যও বাংলাদেশ সফর করেননি।

ল্যাভরভ রাশিয়ার ক্ষমতার পরিমণ্ডলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ইউক্রেনের সাথে রাশিয়া যুদ্ধে জড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক দায়িত্বটা পালন করেছেন তিনি।

এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ আসার বিষয়টি ঠিক হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ল্যাভরভের ঢাকা সফর বাতিল করে মস্কো।

তবে ল্যাভরভ যে ঢাকায় আসতে চান, সেটি তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সফর বাতিলের পর ফোন করে নিশ্চিত করেছিলেন। অবশেষে ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসছেন ল্যাভরভ। 

সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিকালে তিনি নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। ভারতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনে ল্যাভরভ যোগ দেবেন।

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে নানা হিসাবনিকাশ চলছে। বাংলাদেশে তাঁর সফরকে পশ্চিমা দেশগুলো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকা-মস্কোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করতেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন। এ সফরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ইউক্রেন পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশকে স্বাভাবিকভাবেই পাশে চাইবে তারা।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিবিদদের ভূমিকাকে নব্য উপনিবেশবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া। মস্কো মনে করে, এ ধরনের পদক্ষেপ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’।

বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মস্কোর দিক থেকে আলোচনার আভাস মিলেছে। কারণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস করতে গিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ নামের জাহাজটি বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি। আলাপ হবে এই বিষয়েও।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, খাদ্য, সার, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের প্রসঙ্গগুলো আসবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়।

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সইয়ের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ২০টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।

চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে অন্তত চারটি চুক্তি প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত। এর মধ্যে রয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কারিগরি বিষয়ে মেধাস্বত্ব অধিকার, প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের প্রশিক্ষণ।

বাংলাদেশ ও রাশিয়া বন্দী প্রত্যর্পণ, কারাবন্দীদের হস্তান্তর, মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারসহ অন্তত ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা আছে বলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়। 

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বৈশ্বিক রাজনীতিতে রাশিয়াকে প্রবল চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এ অবস্থার মধ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যশস্যসহ নানা পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। রাশিয়ার জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম আনতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে মস্কোর পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতিতে পশ্চিমাদের চাপের মুখে থাকার ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন চাইতে পারেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ফেসবুক বার্তায় জানান, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে রাশিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফরকালে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

Link copied!