গরীব রাষ্ট্রগুলোর জ্বালানি পাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বাধা বন্ধ করতে হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম

গরীব রাষ্ট্রগুলোর জ্বালানি পাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বাধা বন্ধ করতে হবে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তেলের বাজারে বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় গরীব দেশগুলো যেভাবে পারে তেল আমদানি করবে। এক্ষেত্রে ওইসব দেশের প্রচেষ্টায় উন্নত দেশগুলোর বাধা-প্রতিবন্ধকতা বা পাঁয়তারা বন্ধ করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তেল আমদানির ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বন্ধ করে গরীব দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সমালোচনা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ মোকাবিলায় ও উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে কার্যকর পরিকল্পনার খসড়া তৈরিতে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়।

ভারতের কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া এনার্জি উইক ২০২৩’ সম্মেলনে অংশ নেওয়া গ্লোবাল সাউথ দেশের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। গত সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে তানজানিয়ার জ্বালানি বিষয়কমন্ত্রী জানুয়ারি মাকাম্বা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ভারতের কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু বিষয়ক দূত ও অনুষ্ঠেয় কপ-২৮’র সভাপতি সুলতান আল জাবের বক্তব্য রাখেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মস্কোর উপরে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলো। শুধু তাই নয়, ওইসব দেশ বেঁধে দিয়েছে তাদের তেলের দামের ঊর্ধ্বসীমাও। তবে রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়িয়েই চলেছে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

সম্মেলনে  ভারতের কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী স্পষ্টভাষায় বলেন, বাজারের ওপর নির্ভর করেই কেন্দ্র তেল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। যেখানে কম দামে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তা কেনা হবে। এক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগেুলো ভারতসহ অনুন্নত দেশগুলোর ওপর  কোনো ধরণের খবরদারি করতে পারে না। আর আমাদের কত দাম দিয়ে তেল কিনতে হবে তাও ঠিক করে দিতে পারে না।

তানজানিয়ার জালানি বিষয়কমন্ত্রী জানুয়ারি মাকাম্বা অনুন্নত দেশগুলোর জ্বালানি প্রকল্পে উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন না করার সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি তানজানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি এলাকায় নিজস্ব বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে জাপান। তারা এ ধরণের প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছে।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।  বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এখন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. তৌফিক বলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর চারপাশে গ্যাসবহনকারী জাহাজগুলো বিক্রির জন্য ভেসে বেড়ালেও অতিরিক্ত দামের কারণে অন্যান্য দেশগুলো তা কিনতে পারছে না।   

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপদেষ্টা  আরও বলেন, এলএনজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর ফলে দেশে বাণিজ্যিক ও শিল্প কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হয়। পশ্চিমা দেশগুলো আমাদের জন্য আক্ষরিক অর্থে বাজারের চেয়ে বেশি মূল্য চাপিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সম্মেলনে সুলতান আল জাবের বলেন, “গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর যেখানে ৮০ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত, সেখানে বিদ্যুতের সক্ষমতার জন্য সিস্টেমের ‘পুরোপুরি পরিবর্তন’ দরকার।

Link copied!