দেশে প্রতিবছর ২৪ হাজার অগ্নিকাণ্ড, রাজধানী যেন মৃত্যুপুরী

জিন্নাত আরা জশোয়া

এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম

দেশে প্রতিবছর ২৪ হাজার অগ্নিকাণ্ড, রাজধানী যেন মৃত্যুপুরী

দেশে হঠাৎ করে একের পর আগুন লাগার ঘটনায় উৎকণ্ঠায় দেশবাসী। বিশেষ করে রাজধানীতে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক হতাহত ও সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গোটা রাজধানী শহরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে এই নগর যেন এক ‘মৃত্যুপুরী’! বঙ্গবাজারের এই ভয়াবহ আগুন ছাড়াও চলতি বছরেই ঢাকা শহরের সিদ্দিকবাজার ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা আলোড়ন ফেলে দেশজুড়ে। সর্বশেষ রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বঙ্গবাজারে থাকা কয়েক হাজার দোকান, ঈদ উপলক্ষে দোকানগুলোতে তোলা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মালামাল পুরে ছাই হয়েছে ভয়াবহ এই আগুনে।

তবে এসব ঘটনা এই বছরই নতুন নয়। ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে সারাদেশে ২৪ হাজার ১০২টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনায় ৩৪২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ পুড়েছে। এর আগের বছর ২১ হাজার ৬০১টি আগুন লাগার ঘটনায় ২১৮ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়। আর ২০২০ সালে সারা দেশে ২১ হাজার ৭৩টি আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি টাকা। প্রতিবছরই আগুন লাগার ঘটনা বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সম্পদের ক্ষতির পরিমাণও।

২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৭৪টি অগুন লাগার ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮১টি আগুন দুর্ঘটনয় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৫৫২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।  আর্থিক ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই বছর সংঘটিত মোট ১৭ হাজার ৪৮৮টি আগুন লাগার ঘটনায় বাংলাদেশের মোট আর্থিক ক্ষতি হয় ৮৫০ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের পরিসংখ্যানও খুব একটা ভাল হতে দেখা যাচ্ছেনা। গত তিন মাসের চিত্রেই তা বোঝা যাচ্ছে।  তবে শুধু বঙ্গবাজারের ঘটনাই যেন অতীতে যে কোন সময়ে ক্ষতির রেকর্ড ছাড়িয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের মতে আনুমানিক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এই দুর্ঘটনায়।

শুধু বঙ্গবাজারের ঘটনা নয় বরং একের পর এক ঘটছে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনা। চলতি বছরের ৫ মার্চ রাজধানীর মিরপুর রোডের সাইন্সল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনায় আহত হন অন্তত ৩০ জন। একই দিন আগুন লাগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পুড়ে ছাই হয় শত শত ঘরবাড়ি।

এর আগে, গুলশানের একটি ভবনে এসি বিস্ফোরিত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গুলশান ২ এলাকায় ১২ তলা ভবনে আগুন লাগে। এসময় ভবন থেকে লাফিয়ে প্রাণ হারান দুজন। নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকার নান্নু স্পিনিং মিল এবং আড়াইহাজার এলাকার এসপি কেমিক্যালে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে ৬ জনের মৃত্যু হয়। গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যান ২৬ জন। বছরের মাত্র তিন মাসেই একের পর এক এসব আগুন- বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বছর জুড়ে এ ধরণের ঘটনা অব্যাহত থাকলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Link copied!