বইমেলায় প্রকাশিত চিত্রনায়ক ফেরদৌসের বইটি ঘোষ্ট রাইটারের লেখা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৮, ২০২৩, ০২:১৮ এএম

বইমেলায় প্রকাশিত চিত্রনায়ক ফেরদৌসের বইটি ঘোষ্ট রাইটারের লেখা!

বইমেলায় প্রকাশিত চিত্রনায়ক ফেরদৌসের বই ‘এই কাহিনী সত্য নয়’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বইটি ফেরদৌসের লেখা নয়, এটি মূলত তার পক্ষে একজন ঘোষ্ট রাইটারের লেখা। এমনটিই দাবি করেছেন বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড এর প্রকাশক ও নির্বাহী প্রধান মিয়া মুহাম্মদ পারভেজ রানা। পারভেজ রানার দাবি, তাদের প্রকাশনীর সাথেই বইটি প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু বইটি ফেরদৌস প্রকাশ করেন প্রথমা প্রকাশন থেকে। এতে তার আর্থিক বহু ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড দাবি করেছে, চিত্রনায়ক ফেরদৌস তাদের সাথে ‘প্রতারণা’ করেছেন।

বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের ভাষ্য, ২০১৬ সালে তাদের দেওয়া ঘোষ্ট রাইটার আল মামুন সোহাগকে দিয়ে বই লিখিয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। শর্ত ছিল, এই প্রকাশনী থেকেই বইটি প্রকাশ করা হবে। তবে চলতি বছর (২০২৩ সাল) সেই লেখার কিছু পরিবর্তন করে ফেরদৌস আহমেদ প্রথমা প্রকাশন থেকে বইটি বের করেছেন। প্রকাশিত বইটির ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ লেখাই আমাদের ঘোষ্ট রাইটারের।

Ferdous Book Inner 2

প্রথমার সাথে বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের কথোপকথন। 

বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড আরও জানায়, ২০১৬ সালে ফেরদৌস বই প্রকাশের বিষয়ে তাদের সাথে মৌখিক চুক্তি করেন। তার নিজে লেখার মত যথেষ্ট সময় ছিল না। এ জন্য ফেরদৌসের অনুরোধেই মৌখিক কাহিনীকে উপন্যাসে রূপদানে ঘোষ্ট রাইটার আল মামুন সোহাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফেরদৌস ঘোষ্ট রাইটারের পারিশ্রমিক পরিশোধেরও দায়িত্ব নেন। তবে পরবর্তীতে তিনি আর পারিশ্রমিক দেননি।

অভিযোগ করে বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড’র নির্বাহী প্রধান পারভেজ রানা বলেন, চিত্রনায়ক ফেরদৌস প্রথমত আমাদের সাথে প্রতারণা করছেন। দ্বিতীয়ত, প্রথমা-ও আমাদের সাথে প্রতারণা করছে। কারণ, প্রথমা বিষয়টির মধ্যে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণও দিতে চায়। কিন্তু এরপর কেন দিলো না, সেটা তারাই জানে। আর বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার পর আমরা তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি। যখন বুঝতে পারলাম সময়ক্ষেপণ করছে, তখন লিখিত জানালাম যেন প্রমাণ থাকে। আর ফেরদৌস কম্পোজের বিল দিতে চায়। এটা তো টাইপ রাইটারের কাজ না, ঘোষ্ট রাইটার এটি করেছেন। এর ওপর ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সময়, টাকা নষ্ট করলো। আমরা ঘোষ্ট রাইটারের বিল পরিশোধও করলাম। প্রত্যেকের সময়েরই দাম আছে।

ঘোষ্ট রাইটার আল মামুন সোহাগ বলেন, ২০১৬ সালে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে পারভেজ রানার সাথে আমার পরিচয় হয়। নেপথ্যে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের একটি বই। প্রকাশক আমাকে ফেরদৌসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ফেরদৌস ২-৩ ঘণ্টা করে তিন দিন সময় দেন। মুখে মুখে গল্প বলেন। আমি মোবাইলে রেকর্ড করে নিই। সেটা ছিল তার চোখের সামনে ঘটা কিছু ঘটনা। তার আলোকে তিনি কিছু কল্পনার আশ্রয় নিয়ে গল্প সাজাতে বলেন। আমাকেও বলেন, সামঞ্জস্যতা রেখে প্রয়োজনে ঘটনা যুক্ত করতে। সেই অনুযায়ী কাহিনী লিখে উপন্যাসে রূপ দিই। আমি জানতাম, রাইটার্স গিল্ড থেকে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশ হবে। প্রকাশক আমাকে কাজের সম্মানীও দেন। পরে জানতে পারি, লেখা ফেরদৌসের পছন্দ না হওয়ায় তিনি বই প্রকাশে আগ্রহ হারিয়েছেন। ২০২৩ সালে প্রথমা থেকে ‘এই কাহিনী সত্য নয়’ ফেরদৌস রচিত উপন্যাস প্রকাশিত হলে আমি সংগ্রহ করে পড়ে দেখি প্রায় আমার লেখাটিই এটি।

Ferdous Book Inner 3

প্রথমা বরাবরে বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের লিখিত অভিযোগ।

প্রথমা প্রকাশন’র প্রধান নির্বাহী জাভেদ হোসেন এ বিষয়ে জানান, আমাদের কাছে পাণ্ডুলিপি আসছে, সেটা ছেপেছি। পরবর্তীতে তারা যখন অভিযোগ করেছে, আমরা সেটা লেখককে (ফেরদৌস) জানিয়েছি। এরপর লেখক ও প্রকাশকের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েক দফা যোগাযোগ করা হয় চিত্রনায়ক ফেরদৌসের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে সাক্ষাতের দিনক্ষণ দিয়েও পরে আর দেননি। পরে তিনি মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলেন। ফেরদৌস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যখন এটা শুরু করেছিলাম, প্রথম দিকে তারা কয়েক পৃষ্ঠা টাইপ করে দিয়েছেন। আমি তো হাতে লিখি, সেটা ওরা টাইপ করে দিয়েছিল। তা-ও সেই ২০১৬ সালে। আমি বলেছিলাম, যে ছেলেটা টাইপ করছে তাকে পাঠিয়ে দেন; যা খরচ হয়েছে আমি দিয়ে দেবো। এ ছাড়া, বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের সাথে কোনও চুক্তি করিনি আমি। (বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের নির্বাহী পারভেজ রানার সাথে ফেরদৌসের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। ওই কথোপকথনে দুই পক্ষ মিলে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ সম্পর্কে জানা যায়।)

প্রসঙ্গত, ঘোষ্ট রাইটিং হল এমন এক লেখালেখি যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জীবনী লিখতে চান, নিজের কোনো বই লিখতে চান, কিন্তু হাতে সময় নেই কিংবা লেখালেখিটা তার আসে না, তখন তিনি সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কারো দ্বারস্থ হন যিনি লেখালেখিতে দক্ষ। এই দ্বিতীয় ব্যক্তিই হলেন ঘোষ্ট রাইটার বা নেপথ্য লেখক। এই ঘোষ্ট রাইটাররা টাকার বিনিময়ে প্রখ্যাত ব্যক্তির আগের ডায়েরি, সাক্ষাৎকার কিংবা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন আস্ত একটা বই যা পাঠকসমাজে বিপুল আলোড়ন ফেলতে পারে।

Link copied!