বন্ধ গনপরিবহণ, নেই বিকল্প ব্যবস্থা; পথে পথে ধুঁকছে শ্রমিকেরা

তৌফিক হাসান

জুলাই ৫, ২০২১, ০৯:৫৯ পিএম

বন্ধ গনপরিবহণ, নেই বিকল্প ব্যবস্থা; পথে পথে ধুঁকছে শ্রমিকেরা

করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। এ সময় অন্যান্য সকল অফিস বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে কারখানাগুলো। নেই কোন ধরনের গণপরিবহন। এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তিতে পড়েছে শ্রমিকরা।

কখনো হেঁটে কখনো বা রিক্সায় আসতে হচ্ছে শ্রমিকদের। সময়মত প্রবেশ করতে না পারলে ঐ দিনের হাজিরা কাটা। প্রতিদিন যা হাজিরা পায় তা যেন আসতে যেতে চলে যায়। এই রকমই এক ভোগান্তির কথা জানান গার্মেন্টসের শ্রমিক আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, 'আমি প্রতিদিন মানিকগঞ্জ থেকে মিরপুরে যাতায়াত করি। ৮ টায় কারখানায় ঢুকতে হয়। তার জন্য সকাল ৬টার সময় বাসা থেকে বের হই। কিছু পথ হাঁটি আবার কিছু পথ রিক্সায় আসি। হাজিরা পাই ৮০০ টাকা। তার মধ্যে ৬০০ টাকাই চলে যায় আসতে যাইতে। সময় মত ঢুকতে না পারলে হাজিরা কেটে ফেলা হয়। এ যেন লকডাউন নয়, আমগো মারার ফরমান। হয় সব খুলে দিক নয় কারখানা বন্ধ রাখুক।'

এই রকম আরেক ভোগান্তির কথা জানান গার্মেন্টসের শ্রমিক সামিরা খাতুন। তিনি বলেন, 'এটা কিসের লকডাউন। আমাদের তো বের হতে হয়। আমাদের কি কোন ছুটি আছে। প্রতিদিন মিরপুর ২ নম্বর থেইকা হাইট্টা আসি। ঘর থেকে বের হইছি ৭টায় এখন পর্যন্ত অফিস যাইতে পারি নাই। লেট হলে হাজিরা কাটা। খাবো কি আর চলবো কেমনে কন।'

শুধু কাছাকাছি নয় দূরদূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকদের পরতে হয় হাজারো ভোগান্তিতে। মালিকদের পক্ষ থেকেও নেই কোন সুব্যবস্থা। শ্রমিকদের দাবি, দ্রুত যেন লকডাউন তুলে দেয়া হয়। নয়ত মালিকরা গাড়ির ব্যবস্থা করুক। এ বিষয়ে আরেক গার্মেন্টস শ্রমিক মো. ইউসুফ বলেন, 'আমি লালমাটিয়া থেকে আসা যাওয়া করি। গণপরিবহন না থাকার কারণে হেঁটেই চলাচল করতে হয়। মালিকদের সদয় হওয়ার কথা উল্টা তারা এখন আরও রুষ্ট। কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধাই আমাদের দেয় নি।'

গার্মেন্টস খোলা রয়েছে মালিকদের স্বার্থে। এখানে শ্রমিকদেরকে কোন রকম সুযোগ-সুবিধা তো দূরে থাক তাদেরকে উল্টো ছাটাই করা হচ্ছে এই অভিযোগ করে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির মিরপুরের নেতা প্রদীপ রায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'আমরা দেখছি সরকার করোনা ভাইরাস রোধ করতে বারবার লকডাউন দিয়ে যাচ্ছে। এতে কি আসলেই করোনা ভাইরাস রোধ করতে পারছে? সে সব কিছু বন্ধ রেখে কারখানাগুলো খোলা রাখছে। এর জন্য কি শ্রমিকদের কোন যাতায়াতের ব্যবস্থা বা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে? আমরা দেখতে পারছি কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়েছে মালিকদের স্বার্থের জন্য। উল্টো শ্রমিকরা এই লকডাউনের কারণে বিভিন্ন ঝামেলার ভিতর দিন কাটাচ্ছে।'

স্বাস্থ্যবিধির কথা তুলে তিনি আরও বলেন, 'কারখানাগুলোতে কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। হচ্ছে না তাদের করোনা টেস্ট বা ভ্যাকসিন দেয়া। এই সরকার ও মালিকপক্ষ তাদের অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিচ্ছে বার বার।'

গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভোগান্তি দূর করতে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'সরকারের অর্থনৈতিক চাকাকে চালু রাখতে আমরা কারখানাগুলো চালু রেখেছি। আমাদের কারখানাগুলোর বেশিরভাগ শ্রমিক কারখানার আশেপাশে থাকে। তারা সাইকেলে বা হেঁটে কারখানায় যাতায়াত করে। কিছু শ্রমিক আছে যারা একটু দূরে থাকে। আর আমাদের বড় বড় কারখানাগুলোর নিজস্ব পরিবহন আছে, ছোট ছোট কারখানার ক্ষেত্রে যে শ্রমিকরা দূরবর্তী এলাকায় থাকে তাদেরকে আমরা কারখানায় আসার জন্য কোন প্রকার জোর করছি না।

না আসলে তো হাজিরা বাতিল হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কেউ যদি উপস্থিত না থেকেও হাজিরা পায় তবে যারা কাছে আছে তারাও আসতে চাইবে না। তাই আমরা যারা অনুপস্থিত তাদের হাজিরা বাতিল করছি।'

Link copied!